Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাকিবে একাট্টা মাগুরা আওয়ামী লীগ

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫১

সাকিব আল হাসানকে নিয়ে শুরুর দিকে জেলা আওয়ামী লীগে কিছুটা দ্বিধাবিভক্তি থাকলেও পরে তা কেটে গেছে। এখন আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীই তার জন্য কাজ করছেন। ছবি: সারাবাংলা

মাগুরা থেকে: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চমক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মনোনয়ন। নিজ জেলায় মাগুরা-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় আলোচনা। এর আগে এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর। নৌকার প্রার্থী হিসেবে সাকিবের নাম ঘোষণার পর গুঞ্জন ছিল শিখর স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নৌকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেননি তিনি। সাকিবকেই সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু শিখরই নন, সাকিবের পেছনে এখন একাট্টা হয়েছে গোটা মাগুরা আওয়ামী লীগই। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, সাকিবকে জেতানোর জন্যই তারা সবাই মিলে কাজ করছেন। মাগুরার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেল, তারা সাকিব নন, নৌকার প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন।

একটি পৌরসভা, সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা–১ আসন। এখানে সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও সাকিব আল হাসান ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আবদুল ওয়াহাব, রাশিয়া শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রানা আমির ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসমত আরা হ্যাপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পঙ্কজ কুমার সাহা, শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া ও আবদুল্লাহ খান রনি।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানকেই এই আসনে নৌকার প্রার্থী করেছে। শুরুর দিকে কিছু দ্বিধাবিভক্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত এসব প্রার্থীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সবাই তার জন্যই একযোগে কাজ করছেন।

নির্বাচনি পোস্টার-প্রচার সবখানেই অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে সাকিব। ছবি: সারাবাংলা

জেলা আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসমত আরা হ্যাপি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল থেকে সাকিব আল হাসানকে প্রার্থী করেছে। তার পক্ষেই কাজ করছি। সাকিব তো শুধু মাগুরা বা সমগ্র বাংলাদেশেরই না, সারাবিশ্বেরই গর্ব। সাকিব যদি অন্য কোথাও থেকে মনোনয়ন পেতেন, আমাদের ভালো লাগত না।’

বিজ্ঞাপন

ইসমত আরা আরও বলেন, ‘সাবিক আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্ব। এখন তিনি আমাদের এখান থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমি নিজে এক-দেড় মাস ধরে সাকিবের জন্য ভোট চাইছি।’

জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্বীকার করে ইসমত আরা বলেন, ‘এখন সবাই সব ভুলে নৌকার জন্যই কাজ করছি। তবে কিছু লোক থাকবেই যারা বিরোধিতা করবে। সবাই পক্ষে থাকবে, তা তো আর না। যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে, তারা মনোনয়ন আশা করেই। কিন্তু দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যখন মনে করেছেন সাকিবকে মাগুরায় প্রার্থী করবেন, আমরা সেটাই মেনে নিয়ে কাজ করছি। নিশ্চয়ই নেত্রীর সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তা আছে তাকে নিয়ে। তাই এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আমরা মাঠের মানুষ, রাজনীতির মানুষ। কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করি, তা না। আমরা আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে রাজনীতিতে আছি।’

জগদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নবী দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাজারে। পোস্টারের ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে এলেন। ভোটের খবর জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘আমরা নৌকার হয়ে ভোট করছি। সাকিব হোক আর শিখর হোক, নৌকা যাকে দেবে আমরা তাকেই ভোট দেবো, তার হয়েই কাজ করবো। এখন কেন্দ্র থেকে সাকিব মনোনয়ন পাওয়ায় আমরা সবাই তার হয়ে কাজ করছি।’

নির্বাচনি পোস্টার-প্রচার সবখানেই অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে সাকিব। ছবি: সারাবাংলা

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলীয় প্রার্থী হওয়ায় আনন্দিত মাগুরা সাধারণ মানুষও। মাগুরা সদরের বাজার এলাকায় যে কয়েকজনের সঙ্গেই কথা হলো, তাদের সবাই সাকিবের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে জানালেন। একইসঙ্গে সারাবছর দেখা না পাওয়া সাকিব এখন থেকে এলাকায় থাকবেন বলেও আশা তাদের। তারা বলছেন, নৌকা প্রার্থী দেখে সাকিবকে ভোট দেবে সাধারণ মানুষ।

তবে নৌকায় ভোট চাইলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে সাকিব ব্যক্তিগতভাবে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কী ভেবেছেন, সে বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি পাননি বলে জানালেন ভোটাররা। তারা বললেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেয়ে সাকিব নৌকায় ভোট চাইছেন বেশি।

তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নির্বাচনি জনসভায় সাকিব বলেন, নির্বাচিত হলে জেলার উন্নয়নে কাজ করব। স্মার্ট বংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে আমি আমার নির্বাচনি এলাকায় ওয়াই-ফাই ফ্রি করে দেবো।

নৌকায় ভোট চেয়ে সাকিব বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিন। নৌকায় ভোট দিলে আমি জিতব, প্রধানমন্ত্রী জিতবেন, আওয়ামী লীগ জিতবে, বাংলাদেশ জিতবে। প্রধানমন্ত্রী জিতলে এই বাংলাদেশ আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হবে।

এদিকে মাগুরার এই সংসদীয় আসনে সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আরও আছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. সিরাজুস সায়েফিন সাঈফ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কে এম মোতাসিম বিল্লা ও তৃণমূল বিএনপির সনজয় কুমার রায় (রনি)। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ভোটের প্রচারে এসব প্রার্থীর কেউই খুব একটা সরব নন। বিভিন্ন এলাকায় তাদের পোস্টার থাকলেও ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের খুব একটা ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে না।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

আওয়ামী লীগ জাতীয়-নির্বাচন নৌকার প্রার্থী মাগুরা মাগুরা-১ সংসদ নির্বাচন সাকিব আল হাসান

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর