পোস্টারে বিপ্লব বড়ুয়ার ছবি, নদভীর বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ
৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের পোস্টারে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার ছবি ব্যবহার নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মোতালেবের অনুসারীরা জানিয়েছেন, তারা এ পোস্টার প্রকাশ করেননি, নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও তার অনুসারীরা ভুয়া পোস্টার মুদ্রণের সঙ্গে জড়িত।
এ অবস্থায় বিপ্লব বড়ুয়ার পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে, যাতে নদভী ও তার অনুসারীদের দায়ী করা হয়েছে। বিপ্লব বড়ুয়ার আইনজীবী জিকো বড়ুয়া এ অভিযোগ জমা দেন, যার একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবরে পাঠানো হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিপ্লব বড়ুয়ার ছবি ব্যবহার করে পোস্টার আমরা ছাপাইনি। নদভী সাহেব এবং ওনার অনুসারীরা এ কাজ করেছেন। কারণ, ওনারাই সেটা ব্যাপকভাবে প্রচার করছেন। এমনকি নদভী সাহেব প্রকাশ্যে সেই পোস্টার দেখিয়ে বক্তব্যও রেখেছেন। এতে ওনাদের এজেন্ডা পরিষ্কার হয়েছে। আসলে নির্বাচনের মাঠে বিতর্কিত হয়ে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ওনারা এখন ষড়যন্ত্র ও প্রোপাগাণ্ডার আশ্রয় নিয়েছেন।’
বিপ্লব বড়ুয়ার পক্ষে অভিযোগে বলা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে বিতর্কিত, অস্থিতিশীল ও অগ্রহণযোগ্য করতে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও তার অনুসারীরা বিপ্লব বড়ুয়ার ছবি এবং নাম সম্বলিত একটি পোস্টার ব্যবহার করছেন। পোস্টারে ওই আসনের অপর প্রার্থী আব্দুল মোতালেব ও তার প্রতীক ঈগলের ছবিসহ আছে। নদভী প্রচার করতে চাইছেন, ঈগল প্রতীকের প্রার্থী বিপ্লব বড়ুয়া সমর্থিত। এমনকি এক নির্বাচনি জনসভায়ও নদভী নিজ হাতে ওই পোস্টার প্রদর্শন করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সংসদ সদস্য নদভীর এরকম কর্মকান্ড সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১১ বিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা বিধি ১৭(১) মতে ‘নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম’ হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়াও নৌকার প্রার্থী নির্বাচনের আগে একাধিক সমাবেশে স্পষ্টভাবে বিপ্লব বড়ুয়ার নাম উচ্চারণ করে বিভিন্ন কটূক্তি করেছেন।
এছাড়া তিনি নিজেকে ‘সহজ মানুষ নন…’ উল্লেখ করে ও বিপ্লব বড়ুয়াকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া এলাকায় নামতে দেবেন না বলেও হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারিত হয়। বিপ্লব বড়ুয়ার ছবি ও মিথ্যা বক্তব্য সম্বলিত পোস্টার মুদ্রণ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন উপায়ে বণ্টন করা হচ্ছে, যা সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে চরম হুমকি।
এদিকে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘এতো মিথ্যাচার-ষড়যন্ত্র করে কী লাভ? বানোয়াট-ভিত্তিহীন কোনো কিছুর কী স্থায়িত্ব থাকে? আমার ছবি দিয়ে নিজেরাই পোস্টার ছাপিয়ে অপপ্রচার করতে পারবেন- ষড়যন্ত্র করতে পারবেন। কিন্তু কখনো সফল হতে পারবেন না। অতীত তাই বলে।’
‘সত্য ও সততার নিজস্ব একটি শক্তি থাকে, তা অপরাজেয়। সত্য সব সময় আত্মশক্তিতে বলিয়ান। মিথ্যা দিয়ে তাকে দমিয়ে রাখা যায় না। আমি ঢাকা-৮ আসনের একজন ভোটার। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকাতেই ভোট দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি মন্ত্রী-এমপি কিংবা বড় পদ-পদবী পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামিনি। ভবিষ্যতেও নামবো না। আমি নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি, আমার ছবি ব্যবহার করে কে বা কারা পোস্টার ছাপিয়েছে তা খুঁজে বের করতে। আমি কোনো দিন কোনো প্রকার কপটতা বা প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করিনি।’
জানতে চাইলে বিপ্লব বড়ুয়ার আইনজীবী জিকু বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সংসদ সদস্য নদভী বিপ্লব বড়ুয়ার নামে বিভিন্নভাবে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এর আগেও ওই সংসদ সদস্য আমার স্যারের নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন জনসভায় খারাপ মন্তব্য করেছেন, যেটা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার হয়েছে। এবার তিনি নিজেই স্যারের ছবি দিয়ে পোস্টার বের করে নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এটার তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’
এ অভিযোগের বিষয়ে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে জেলা প্রশাসক অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী। ‘জামায়াত ঘরানার’ নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ তাকে দলে নিলেও দলটির পোড়খাওয়া অনেক নেতাকর্মীই তাকে মেনে নিতে পারেননি। একাংশের বিরোধিতার মধ্যেই নদভী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
গত দশ বছরে সংসদ সদস্য হিসেবে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘জামায়াত তকমা’ ঘুচিয়ে এলাকায়-দলে প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করতে বিভিন্নসময়ে তার কর্মকাণ্ড বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ আছে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নিজের স্বজন ও অনুসারীদের তিনি আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যারা ছিলেন, তাদের কোণঠাসা করেছেন।
এর ফলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে পাশে নিয়ে গত দুই নির্বাচনে তিনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন নদভীকে ছেড়ে গেছেন। তার একসময়ের ঘনিষ্ঠ সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে নেমেছেন নির্বাচনের মাঠে।
সারাবাংলা/আইসি/এনএস
আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী আব্দুল মোতালেব চট্টগ্রাম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া