সর্বজনীন ভোট বর্জনের ডাক বিএনপির
৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২০
ঢাকা: সর্বজনীন ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) দলের সর্বোচ্চ নীতিনিধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ডাক দেন ড. মঈন খান।
গুলশানে নিজের বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন মঈন খান। তার সঙ্গে ছিলেন দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।
তিনি বলেন, ‘এই একদলীয় বাকশালী সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই তাদের অন্যায় ও অবৈধ হুমকি পরোয়া করার কোনো কারণ নেই। সর্বজনীন ভোট বর্জনের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনে জনগণের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণ একদলীয় শাসনের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে শিগগির মুক্তি দেবে।’
ড. মঈন খান বলেন, ‘আমরা আজকে গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি এই আহ্বান জানাব, আপনারা এই সরকারের কোনো হুমকি-ধামকি অথবা ভয়-ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে সরকারকে মোকাবিলা করুন, যে বা যারা আপনাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করতে চায় তাদের চিহ্নিত করুন।’
ভাতা কার্ড জব্দ করে কিংবা ভাতা বন্ধ করে দিয়ে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্যকরণের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত হবেন বা হচ্ছেন ভবিষ্যতে তাদের জবাবদিহি করতে হবে’— বলেন ড. মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার হুমকি, ভাতা কার্ডধারী অসহায় মানুষের জীবনজীবিকাকে হুমকিতে ফেলা কিংবা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পোস্টাল ভোট অথবা অন্য কোনো ভুমিকায় তাদেরকে অবতীর্ণ করিয়ে নির্বাচনে প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আইনত অপরাধ। বিশেষত যারা রাষ্ট্রীয় ভাতা ও বেতন পাচ্ছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র থেকে এই সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এটা দল ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো অনুদান নয়। অতএব ভাতা কার্ডের বিনিময়ে বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে ভোট দিতে বাধ্য করা সম্পূর্ণ বেআইনি।’
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির একটি উদারনৈতিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দল। বিএনপিকে নিয়ে অনেক গল্প সরকার সাজিয়েছে, অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। আমরা জানি অতীতে হয়তো এমন একটি বিশ্ব পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল, আপনারা জানেন, আফগানিস্তানের একটি চিত্র ছিল তখন হয়তো সরকারের এই সব গাল-গল্প অনেককে মিথ্যাভাবে প্রভাবিত করেছে কিন্তু আজকের পৃথিবী আলাদা। আজকে সরকার নতুন করে যদি সেই ২০১৪ এর ফর্মূলা এপ্লাই করে বিএনপি এই শান্তিপূর্ণ উদারনৈতিক দলের কোনো মিথ্যা ভাবমূর্তি দেশে বা বিদেশে প্রচার করতে চায় বা চাইছে, তাদের সেই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের মিডিয়া ও বিশ্বের গণতন্ত্রীকামী মানুষ বাংলাদেশের যে চিত্রে দেখছে, সেটা তারা ইতিমধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে। এখানে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই। আমি বলেছি ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাকডাউনের কথা তারাই বলেছে, আজকে নতুন করে তারা যে কথাগুলো বলছে যে, একজন মানুষের ইচ্ছায় আজকে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের ইচ্ছা নির্ধারিত হবে, এটা কোদিন হতে পারে না।’
ড. মঈন খান বলেন, ‘আমরা এই দেশের এই অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারি সরকারকে একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় হটিয়ে দিয়ে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করব। সরকার ভাবছে ৭ জানুয়ারি তাদের জয়লাভের দিন। আমি বলব, ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের পরাজয়ের দিন। কারণ, সেদিন তারা বাংলাদেশের নতুন করে অপমৃত্যু ঘটাবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এর আগেও ঘটেছে যে, আমাদের আন্দোলনকে বিপদগামী করার জন্য, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য সরকার নিজেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় আমাদের ওপর চাপানো চেষ্টা করেছে। এখনো সেই অপচেষ্টা চলছে। আপনারা কয়দিন আগে দেখেছেন যে, কেউ কিছু জানে না কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, হাসপাতালগুলোতে একটা নির্দিষ্ট দিনে রেডি রাখার জন্য যাতে তারা চিকিৎসা করতে পারে। ঠিক ওইদিন একেবারে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে বেশকিছু গাড়িতে আগুন ধরে গেল এবং বেশ কিছু লোক সেখানে মারা গেল।’
তিনি বলেন, ‘কোনো তদন্ত ছাড়াই সেদিন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, এটা করেছে, যারা অবরোধ করেছে তারা। গোটা ব্যাপারটা একটা অপরাধের কথা, একটা অনুমান নির্ভর একটা কথা বলা, তারপরে সেই কাজটা ঘটানো এবং ঘটিয়ে তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো। এটা এখন থেকে নয়, বহু বছর ধরে সরকার এই অপকৌশল চালিয়ে আসছে। তারা বিরোধী দলের আন্দোলনটানে বিপদগামী করার জন্য অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখানে তারা তারা নির্বাচন করছে, বিরোধী দল এই নির্বাচনে নাই। এরপরও কয়েকজন মানুষ মারা গেল, অনেক মানুষ আহত হল, অনেক জায়গায় অগ্নিসংযোগ হয়েছে, বাড়ি-ঘর আক্রমণ হয়েছে সেটা কে বলবে? বিএনপি এই নির্বাচনের মধ্যে নাই বা যারা বিরোধী দল আন্দোলনরত তারা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্রেফ বলছি জনগণের কাছে এই নির্বাচন একটা প্রহসন, এটা অর্থহীন নির্বাচন যেটাতে দয়া করে কেউ জড়িত হবেন না। কারণ, এটা একটা অপরাধমূলক তৎপরতা, এটাতে জড়িত হওয়াও অপরাধ। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আর কোনো আহ্বান আমাদের নাই। অতএব আর কোনো কাজ করলে ওইটা দায় আমাদের ওপর নাই। এই বর্জন করার আইনগত অধিকার আমার কাছে। এই বর্জন যারা করবে তারা আমাদের আহ্বান শুনবে। এর বাইরে অন্য যা করবে সেটা তাদের (সরকার) হুকুমে করবে আমাদের হুকুমে না।’
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ