আবাসিকে গ্যাস সংকট, সরবরাহে ঘাটতি ৩৮ শতাংশ
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১২
ঢাকা: সকালে গ্যাস থাকে তো বিকেলে নেই। বিকেলে থাকে তো রাতে নেই। কখনো গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক, তো কখনও একেবারেই কম। আবার কখনও একেবারেই নেই। এই পরিস্থিতি এখন রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায়। রাজধানীর পুরান ঢাকা, রামপুরা, বনশ্রী, মুগধা, মিরপুরের কিছু এলাকা, শেওড়াপাড়া থেকে গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে। আবাসিকের গ্রাহকরা জানিয়েছেন, কারও বাসায় সকালে গ্যাসের চাপ কম থাকে, আবার কারও বাসায় বিকালে চাপ কম থাকে। ফলে গ্রাহকরা অনেকেই ঝুঁকছেন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দিকে। গ্যাসের এ সমস্যার খবর মিলেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও।
এদিকে শীত মৌসুমে গ্যাসের মোট চাহিদার মোট ৬২ শতাংশ সরবরাহ করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। আর এতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সারকারখানা। যে কারনে সংকট দেখা দিয়েছে আবাসিকে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, বন্ধ থাকা এলএনজি টার্মিনাল চালুর পাশাপাশি শীত মৌসুম চলে গেলে ঘাটতি কমে আসবে।
পেট্রোবাংলা সুত্র অনুযায়ী, দেশে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৩০০ ঘনফুটের চাহিদা থাকলেও চলতি মৌসুমে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪১০ কোটি ঘণফুট। এর বিপরীতে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ২৫৫ ঘণফুট। এতে চাহিদার চেয়ে ঘাটতি থাকে মোট ৩৮ শতাংশ।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, দেশে যে দুইটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয় তার একটি এখন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। যে কারনে এই সংকট তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ দেশের আবাসিক খাতে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, শাঁখারিবাজার, বংশাল, হাটখোলা, বকশীবাজার, নবাবগঞ্জ, হাটখোলা, গোপীবাগ, গোলাপবাগ, মানিকনগর এলাকায় সকাল ৮টার পর থেকে গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। দুপুর পর্যন্ত একেবারে কমে যায় আবার বিকেলের দিকে চাপ বাড়তে থাকে। ফুল চাপ আসতে আসতে রাত হয়ে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। মুগধা, মান্ডা, রাজারবাগ, মাদারটেক এলাকায় দিনে কোনো গ্যাস থাকে না।
মান্ডা এলাকার সিকদার গলির বাসিন্দা ইউসুফ আলী সারাবাংলাকে জানান, এই এলাকায় দিনে গ্যাস থাকে না। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের রাত বারোটার পর গ্যাস আসে আবার ভোর না হতেই চলে যায়।
তারা বলেন, রাতেই খাবার রান্না করে রাখেন। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা এলপিজি ব্যবহার করছেন। কেউ বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছেন। রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, আবুল হোটেল, খিলগাও, তালতলা, মৌচাক, মগবাজার শান্তিনগর এলাকায় সকালে গ্যাস থাকে না। মিরপুর-১২, ১৪ নম্বরে গ্যাস সংকট তীব্র থাকলেও মিরপুর-১,২ এ কিছুটা কম বলে জানা গেছে। আবার শেওড়াপাড়াতেও গ্যাস সংকট রয়েছে। সেখানেও দিনের একটা সময় গ্যাসের চাপ বেশ কম থাকে। উত্তরাতেও কোনো কোনো সেক্টরে গ্যাসের চাপ কম।
এদিকে গ্যাস সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকেও। চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা যাচ্ছে মাত্র ২৮ কোটি ঘনফুট। এরমধ্যে বেশিরভাগই ব্যবহার করা হয় চট্টগ্রামের দুইটি সার কারখানা ও তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ফলে আবাসিকে সংকট তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে নগরীর অনেক পাড়া মহল্লায় দিনের বেশিরভাগ সময় চুলা চলে না। একেবারেই গ্যাস থাকে না। সংকট শিল্প কারখানাতেও। এরই মধ্যে এই পরিস্থিতি জানিয়ে জ্বালানি বিভাগে চিঠি লিখেছে দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ – সিসিআআই। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়। বিষয়টি পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সারাবাংলাকে বলেন, শীতের মৌসুমে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। এরমধ্যে একটি এলএনজি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। আবার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। রয়েছে সারকারখানাও। সব মিলিয়ে চাহিদার বিপরীতে একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমরা নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে ঘাটতি কমে আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানা গেছে, গ্যাস সরবরাহে শিল্প কারখানা, সার কারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ সব কারখানায় যে পরিমান গ্যাসের চাহিদা, সে অনুযায়ীও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আবার নারায়নগঞ্জে সামিট, ইউনিক ও রিলায়েন্সের প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ গ্যাস প্রয়োজন। সরবরাহ সংকটে এতদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে আনা যায়নি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংকটের মধ্যেই কেন্দ্রগুলো নির্মাণের অনুমোদন পায়। জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনালটির সংস্কারকাজ শেষ হলে গ্যাস সংকট কমে যাবে।
সারাবাংলা/জেআর/একে