ভোট উৎসবে মেতেছেন ৭৩ বছরের খালেক
৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৬
ঢাকা: সারাদেশ মেতেছে ভোট উৎসবে। আর একদিন পরেই সেই উৎসব। ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে লাখ লাখ ভোটার ছুটছেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে নিজের এলাকায়। দেশজুড়ে প্রার্থী, সমর্থক আর ভোটারদের সরব উপস্থিতি। অসংখ্য ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায়। কেউ আসছেন ঢাকায়, আবার কেউ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন নানান জেলায়। এদেরই একজন আব্দুল খালেক।
আবদুল খালেকের গল্পটা অবশ্য ভিন্ন। ভোট দিতে তিনি শেরপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন ৪ দিন আগেই। এই ফাঁকে যাতায়াত আর থাকা-খাওয়ার খরচ মেটাতে কাজ করছেন চল্লিশ বছর কাটিয়ে যাওয়া রাজধানীতে।
৭৩ বছর বয়সী খালেকের পৈতৃক বাড়ি গাজীপুরের মাওনায়। যুবক বয়সে ভাগ্যান্বেষণে যান ভারতে। সেখানে ১৩ বছর কাটিয়ে দেশে ফেরেন। সাথে আনা টাকা দিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ির পোড়াবাড়ি ইউনিয়ন এলাকায় বাড়ি করেন। সেটিও ৪৩ বছর আগের কথা। এরপর আসেন ঢাকায়।
খালেক ঢাকায় এসে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় উঠেন। সেখানে থেকেই শুরু করেন রিকশা-ভ্যান চালানো। পল্লবী পোস্ট অফিসে ‘খ্যাপের’ অপেক্ষায় থাকতেন ভ্যান নিয়ে। তাকে ঘিরেই আস্তে আস্তে সেখানে একটা ‘ভ্যান স্ট্যান্ড’ গড়ে ওঠে।
টানা ৪০ বছর রাজধানীর আনাচে-কানাচে গিয়েছেন ভ্যান নিয়ে। এরপর বয়স যখন সত্তর, শরীরও ভাঙতে শুরু করে… তখনই বিশ্বজুড়ে থাবা বসালো করোনাভাইরাস। বয়স তখন ৭০ বছর। খালেক ফিরে গেলেন গ্রামে, স্বজনদের কাছে।
খালেক ভোটার হয়েছিলেন পল্লবী এলাকায়। রাজনীতি সচেতন খালেক মনে করেন প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা অবশ্যই কর্তব্য। সারাবাংলাকে তিনি জানালেন, শুধু ভোট দিতেই তিন বছর পর ঢাকায় এলেন। ভোট দিয়ে ৮ জানুয়ারি আবার ফিরে যাবেন শেরপুরে।
ভোটের আগের দিনগুলো ঢাকায় কিভাবে কাটছে তাও তিনি জানালেন। বললেন, ‘গরীব মানুষ আমি। ভোট দিতে আসা যাওয়ার একটা খরচ আছে, তাই এই কয়দিন ভ্যান চালিয়ে টাকাটা তোলার চেষ্টা করছি।’
নৌকার সমর্থক খালেককে ভোট দেয়ার জন্য আসা-যাওয়ার খরচ বাবদ স্থানীয় প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। ‘স্মিত হেসে’ খালেক উত্তর দিলেন, ‘ভোট দেওয়া কর্তব্য। আমার ভোট আমি দিব, টাকা নেবো কেনো? তাই এই কয়েকদিন কোনো কাজ থাকলে যেন আমাকে দেয়, সেজন্য এখনকার ড্রাইভারদের (ভ্যান চালক) বলেছিলাম। তারাই তাদের হাতে কাজ থাকলে আমাকে দেয়।’
তবে খালেকের একটা আক্ষেপ আছে এই নির্বাচনকে ঘিরে। তার এলাকার প্রার্থী অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী। তাকে এবারও ভোট দিতে পারলেন না বলে। আফসোস করে বললেন, “ঢাকার ভোটার না হলে ‘মতিয়াকে’ ভোট দিতাম। আগে এটা মনে পড়লে কেন্দ্র পরিবর্তন করে নিতাম।”
খালেকের মতো সচেতন ভোটাররাই নির্বাচনকে উৎসবে পরিণত করেন। সেই পরিস্থিতিরই প্রতিধ্বনি খালেকের কণ্ঠে, বললেন, ‘যারা ভোট না দিতে বলে, তারা দেশের শত্রু। আমরা নৌকার লোকেরা সবসময়ই ভোট দেই, ভোটের পক্ষে থাকি।’
সারাবাংলা/রমু