বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: ৪ মরদেহে ঢামেকে
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৪১
ঢাকা: রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় আগুন লাগার পর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে উদ্ধার হওয়া চার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মরদেহ চারটির পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে দুটি মরদেহের দুজন দাবিদার পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মরদেহগুলো ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এর আগে রাত ৯টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন লাগে। আগুনে ট্রেনের পাঁচটি বগি পুড়ে গেছে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, চারটি মরদেহেই সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এগুলো জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুন- ‘আমি এমনিতেই মরে যাব, আমার বউ-বাচ্চাকে বাঁচান’
এদিকে ওই মধ্যরাতেই বেনাপোল এক্সপ্রেসে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দাবি করে দুটি মরদেহের দুজন দাবিদার ঢামেক হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। তারা বলছেন, মরদেহগুলোর মধ্যে একটি ট্রেনে দগ্ধ আসিফ মোহাম্মদ খানের স্ত্রী নাতাশা জেসমিনের (২৫)। এলিনা ইয়াসমিন (৩০) নামে আরেকজনের মরদেহও সেখানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
রাতে ঢামেক হাসপাতালে মুরাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এলিনা ইয়াসমিন (৩০) ও তার পাঁচ মাসের ছেলে সৈয়দ আরফান এবং আরফানের মামা ও মামি ছিলেন। ১০ দিন আগেই এলিনার বাবা মারা গেছেন। ছেলেকে নিয়ে তাই এলিনা গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলেন। গন্তব্য ছিল মিরপুর ৬০ ফিটের বাসা। আরফানের বাবা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন ঢাকার বাসাতেই ছিলেন।
আরও পড়ুন- আগুন সন্ত্রাসের শিকার বেনাপোল এক্সপ্রেস, অঙ্গার ৪ দেহ | ছবি
মুরাদ বলেন, আরফানের মামার মাধ্যমে খবর পাই, ওদের ট্রেনে আগুন লেগেছে। আরফান এবং ওর মামা-মামি ট্রেন থেকে বের হতে পারলে আরফানের মা এলিনা ট্রেন থেকে বের হতে পারেনি। ওর কোনো সন্ধান আমরা পাইনি। ও সম্ভবত ট্রেনের মধ্যেই পুড়ে মারা গেছে। যে লাশগুলো এখানে এনেছে, তার মধ্যে নিশ্চয় এলিনার লাশ থাকবে।
এদিকে দগ্ধ আসিফের বাসা ঢাকার গেন্ডরিয়ার শরৎগুপ্ত রোডে। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আসিফের বাবা আবু ছিদ্দিক খান বলেন, আসিফ তার স্ত্রী নাতাশাকে নিয়ে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা ফিরছিল। ট্রেনে আগুন লাগলে আসিফকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও নাতাশাকে পাওয়া যায়নি। আসিফ দগ্ধ অবস্থায় যতটুকু জানাতে পেরেছেন, সে তথ্য অনুযায়ী নাতাশা ট্রেনের ভেতরেই পুড়ে মারা গেছে বলে জানান আবু ছিদ্দিক। নাতাশা ওয়ারীতে একটি ইংলিশ একাডেমির শিক্ষিক ছিলেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন- বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুন তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি
এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেসে দগ্ধ অবস্থায় একজন এবং ধোঁয়ায় অসুস্থ আরও চারজনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ও ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দগ্ধ হয়ে ভর্তি আছেন আসিফ মোহাম্মদ খান (২৭)। আর ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছেন ডা. কৌশিক বিশ্বাস (৩২), নাফিজ আলম (২২), অমিত দেবনাথ (২৭) ও মাসুদ রানা (৩০)।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল বলেন, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় ইনস্টিটিউটে চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন দগ্ধ। বাকি তিনজনের শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত না।
আরও পড়ুন- ট্রেনে আগুনে পুড়ে ৪ জনের প্রাণহানি
ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান জানান, চারটি মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী ও একটি শিশুর মরদেহ রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। বাকি দুটি মরদেহ পুরুষ নাকি নারীর, সেটি বলা যাচ্ছে না। দুটি মরদেহের দাবিদার পাওয়া গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করে তারপর সেগুলো হস্তান্তর করা যাাবে।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর