তেড়ে গিয়ে লতিফ বললেন— সুজন্যা এডে কিল্লাই আইস্যি
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিজ এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের তিন নেতা গেছেন শুনে মধ্যরাতে বাসা থেকে দলবল নিয়ে বেরিয়ে আসেন চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফ। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ সময় তিনি নেতাদের না পেলেও প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের কয়েকজন কর্মীকে নাজেহাল করেন। এছাড়া লতিফ তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত এ তিন নেতার নাম ধরে গালিগালাজও করেন।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে নগরীর বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী এম এ লতিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দলের নগর থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বড় অংশ। বিরোধী অংশটির নেতৃত্বে আছেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তারা সমর্থন দিয়েছেন কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনকে।
জানা গেছে, লতিফ, সুজন ও আলতাফ শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গোসাইলডাঙ্গা শ্মশানকালী মন্দিরে যান। সেখানে তারা প্রায় ২০ মিনিট সময় অতিবাহিত করেন। তারা সংখ্যালঘু ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার অনুরোধ করেন। তবে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি তারা বক্তব্য দেননি।
কিন্তু তিন নেতা যাবার খবর পেয়ে শ্মশান কালীমন্দিরের পাশে জিয়াউল হক সুমনের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে তার অনুসারীরা বেরিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তখন তিন নেতা সুমনের ক্যাম্পে গিয়েও কিছুসময় বসেন।
সুমনের কর্মী এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘নাছির ভাইয়েরা চলে যাবার কিছুক্ষণ পর এমপি সাহেব (এম এ লতিফ) শ’খানেক কর্মী নিয়ে গোসাইলডাঙ্গা রামকৃষ্ণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে আসেন। সেখানে আমরা নেতাদের বিদায় দিয়ে সুমন ভাইয়ের ক্যাম্পে ফিরছিলাম। তখন এমপি সাহেব আমাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। আমার কাঁধে হাত দিয়ে আমাকে টেনে আনেন। তখন উনার সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের এক বড় ভাই আমাকে ছাড়িয়ে নেন।’
সুমনের পক্ষে গোসাইলডাঙ্গা রামকৃষ্ণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (লতিফ) এসেই গালিগালাজ শুরু করেন। সুজন্যা এডে কিল্লাই আস্যি, ইতার এডে হাম কি, নাছিররে তোরা এডে কিল্লাই আইন্যূস (সুজন এখানে কেন এসেছে, উনার এখানে কাজ কী, নাছিরকে তোরা এখানে কেন এনেছিস)- এ ধরনের কথাবার্তা বলতে থাকেন। আমাদের এক কর্মীর গায়ে হাত দিয়ে শাসাতে থাকেন। সেটা দেখে আমাদের কর্মীরা অনেকে পালিয়ে সেখান থেকে চলে যান।’
‘পরে তিনি আমাদের ক্যাম্পে আসেন। সেখানে তখন কেউ ছিলেন না। একজনের হাতে কিছু কেটলির লিফলেট ছিল। সেগুলো নিয়ে ফেলেন। এমপি সাহেবের কর্মীদের কয়েকজন ক্যাম্পে পাথর ছুঁড়ে মারেন। ক্যাম্পেও এমপি সাহেব গালিগালাজ করেন।’
জানতে চাইলে সুমনের পক্ষের ওই কেন্দ্রের সচিব টিস্যু মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি সাহেবের বাড়ি গোসাইলডাঙ্গা। আমার বাড়িও গোসাইলডাঙ্গা। আমি কিছু বলতে চাই না। নির্বাচনের পর তো আমাকে এলাকায় থাকতে হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে এম এ লতিফের নির্বাচন সমন্বয়ক যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতে সুজন ভাইয়েরা (খোরশেদ আলম সুজন) গোসাইলডাঙ্গা গিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাবার জন্য হুমকিধমকি দেন। লতিফ সাহেব তখন উনার বাড়িতে ছিলেন। খবর পেয়ে উনি নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। এসময় তিনি ভোটারদের হুমকিধমকিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বলেন এবং ভোটকেন্দ্রে যাবার অনুরোধ করেন। এখানে অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নৌকা এবং কেটলি প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। সেখানে উনিও (এম এ লতিফ) ছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে উভয়পক্ষকে থানায় আসতে বলেছি। উভয়পক্ষ জিডি করতে চাইলে নেয়া হবে। এরপর মামলা করার মতো কোনো উপাদান থাকলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/ইআ