‘ভয় পাবেন না, ভোট দিয়ে সন্ত্রাসীদের জবাব দিতে হবে’
৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২৭
ঢাকা: ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতেই বিএনপি-জামায়াত বাস-ট্রেনে আগুন দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত। তবে ভীত না হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটের মাধ্যমেই এইসব আগুন সন্ত্রাসের জবাব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রই এই দলের মূলমন্ত্র। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই আমাদের আস্থা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা আছে বলেই আমরা নির্বাচনে বিশ্বাসী। তাই ভোটারদেরকে অনুরোধ জানাব, আপনারা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে আসবেন। ব্যালটের মাধ্যমেই আগামীকাল সন্ত্রাসীদের জবাব দিতে হবে। ভয় না পেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ঐক্যের
শক্তির কাছে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিনাশ হবেই।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলটির এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন ক্ষমতাসীন দলটির মিডিয়া উপকমিটি এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, পেশাগত কারণেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে আপনার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বাংলাদেশ যখন নির্বাচনের পথে হাঁটছে, ঠিক সেই সময়ে আমরা আবারও আগুন সন্ত্রাস ও খুনের রাজনীতির ঘৃণ্য চিত্র দেখতে পাচ্ছি। আপনারা দেখেছেন, নির্বাচন এলেই বিএনপি-জামাতের নির্বাচনবিমুখ চরিত্রটি প্রকাশ হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ২০১৩-১৪ সালের মতো তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
শুক্রবার ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনার উল্লেখ করে আরাফাত বলেন, চার চারটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার আগুনে। আরও বেশ কয়েকজন দ্বগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল ও আজ এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াত দেশের ২০টিরও বেশি ভোটকেন্দ্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। রাজবাড়ীর একটি স্কুলে পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশের একজন সদস্যকেও হত্যা করেছে তারা। রামুতে রাখাইন মন্দিরে গতকাল মধ্যরাতে আগুন দিয়েছে। ডেমরা ও কুমিল্লায় দুটি বাসে আগুন দিয়েছে। ভোলাতে বেসরকারি হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এ চিত্র শুধুই গত দুই দিনের। নির্বাচন বিরোধিতা আর সন্ত্রাসের ইতিহাস তাদের ডিএনএতেই আছে। এ দফায় ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডব নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। তাদের কাজই হলো মানুষ হত্যা, বাস-ট্রেনে আগুন, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, দেশের সম্পদ ধ্বংস করা, বোমা বিস্ফোরণ।
২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত কী কী নাশকতা করেছে, তার তথ্য তুলে ধরেন মোহাম্মদ এ আরাফাত। বলেন, আপনারা নিশ্চয় লক্ষ করেছেন, এসব ঘটনা ঘটাতে গিয়ে অনেক স্থানেই বিএনপির কর্মীরা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। গত ৫ নভেম্বর উত্তরার আবদুল্লাহপুরে ককটেল বিস্ফোরণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি কাজী মোহাম্মদ হাসান। ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে রেলে হাতবোমা নিক্ষেপের সময় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক জয়নাল আবেদিন, হাবিবুর রহমান ও মোহাম্মদ আরিফকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। গাজীপুরের শ্রীপুরের বনখড়িয়ায় রেল লাইন কেটে নাশকতার দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়োর্ডের কাউন্সিলর আজমল হোসেন ভুঁইয়াসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা অপরাধের দায়ও স্বীকার করেছে। মাগুরা থেকে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেফতারের পর বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা পরিকল্পনার কথা জানতে পারে পুলিশ।
নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই ভোট এলেই সাম্প্রদায়িক শক্তি আর জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে নারী ভোটার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু আর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভোটারসহ দেশের নাগরিকদেরই তারা টার্গেট করে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, তাদের এখনকার মূল কাজ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। সে কারণেই কোটি কোটি টাকা খরচে লবিস্ট নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভুয়া সংবাদ প্রচার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বিএনপি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ানোর পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও গোলাম রব্বানী চিনু প্রমুখ।
সারাবাংলা/আইই/টিআর