Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সারাদেশে ভোট আজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৫৯

ব্যালট বাক্সসহ বিভিন্ন নির্বাচনি সরঞ্জাম এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে জেলায় জেলায়। ভোটের দিন সকালে ব্যালট যাবে কেন্দ্রে। রোববার সকাল ৮টায় সারাদেশে একযোগে ২৯৯ আসনে শুরু হবে ভোট। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশের ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ভোট আজ রোববার (৭ জানুয়ারি)। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক টহল জোরদার করা হয়েছে। সারাদেশে ভোটকেন্দ্রগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা রাখা হয়েছে।

দেশে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রয়েছে এসব দলের মধ্যে। অন্যদিকে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলসহ মোট ১৬টি দল এবার ভোট বর্জন করেছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন। ভোটারদের আশ্বস্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু আমরা যেভাবে বলি, সেভাবে নির্বাচন সবসময় শান্তিপূর্ণ হয় না। আমরা চাই, আমাদের নির্বাচন কেবল দেশীয়ভাবেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আরও পড়ুন- যেভাবে ভোট দেবেন

সিইসি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। ভোট শুরু হবে সকাল ৮টায়, শেষ হবে বিকেল ৪টায়। তবে কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের লাইন থাকলে ভোট শেষ হতে আরও দেরি হতে পারে। অর্থাৎ যারা ভোট দিতে আসবেন, তাদের ভোট দেওয়া শেষ হলেই ভোট বন্ধ হবে।

মোট প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট এক হাজার ৯৬৯ প্রার্থী ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৫৩২ জন। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৪৩৭ জন। নির্বাচনে মোট নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৯৮ জন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের নারী প্রার্থী ৬৭ জন, স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী ২৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী দুজন।

আরও পড়ুন- জাতির উদ্দেশে যা বললেন সিইসি [পূর্ণাঙ্গ ভাষণ]

নির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী

ভোটের মাঠের পরিস্থিতি বলছে, নির্বাচন হতে যাওয়া ২৯৯টি আসনের প্রায় অর্ধেক আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জয় প্রায় নিশ্চিত। তবে বাকি আসনগুলোতে তাদের সামনে প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা আবার আওয়ামী লীগেরই মনোনয়নবঞ্চিত নেতা।

বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সহজে জয় পাবেন বলে ধারণা ছিল সবার। অনেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুললেও জয়ের বন্দরে নৌকার ভিড়তে বিশেষ বেগ পেতে হবে না বলেও মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ সমঝোতার ভিত্তিতে ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে। এসব আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেই। তবে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া ১৪ দলকে ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনেও আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। সব কটি আসনে তাদের জয় গত নির্বাচনের মত সহজ নাও হতে পারে বলে অভিমত স্থানীয় ভোটারদের।

আরও পড়ুন- জনমত মডেলে নির্বাচনি যুদ্ধ, ভোট উৎসবের চ্যালেঞ্জেও আওয়ামী লীগ

রেকর্ডসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ জন, আনসার ব্যাটালিয়ন পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন ও সশস্ত্র বাহিনীর ৪০ হাজার ৫০৯ জন সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য আছেন ৩৮ হাজার ১৫৪ জন, কোস্টগার্ড দুই হাজার ৩৫৫ জন। এ ছাড়া বিজিবি ৪৪ হাজার ৯১২ জন, পাঁচ হাজার ৫৬০ জন র‌্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকছেন।

৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা বলয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র ও দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ-আনসারের ১৫-১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় পৌনে সাত লাখ সদস্য শুক্রবার মাঠে নেমেছেন। এদিন ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও নেমেছেন। তারা নির্বাচনি অপরাধ দেখলে তাক্ষণিক সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন। এরই মধেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনি মালামাল। তবে ব্যালট যাবে ভোট গ্রহণের আগ মুহূর্তে।

আরও পড়ুন- কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম, রাত পোহালেই ভোট

নির্বাচনে মোট ভোটার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। একজন বৈধ প্রার্থীর মৃত্যুতে ভোটের মাঝপথে নওগাঁ-২ আসনের ভোট বাতিল করেছে কমিশন। এ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৯৭ জন, নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৮ জন।

ভোটে চালকের আসনে ৬৬ রিটার্নিং কর্মকর্তা

ভোট নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু করতে চালকের ভূমিকায় থাকছেন ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে আছেন ৬৪টি জেলার ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুজন বিভাগীয় কমিশনার। ৪২ হাজারের ভোটকেন্দ্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পোলিং অফিসার পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক নির্বাচনি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এদের মধ্যে আছেন ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৪২ হাজার ১৪৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার।

নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি অর্গানোগ্রাম অনুসরণ করা হয়। এতে সবার ওপরে থাকেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তার তত্ত্বাবধানেই সার্বিক ভোট প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। আর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন- ভোট কারচুপি-জালিয়াতির প্রমাণ পেলে প্রার্থিতা বাতিল: সিইসি

সম্ভাব্য ব্যয় ২২৭৬ কোটি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যয় শুরুতে দেড় হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এবারের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোসহ সার্বিক প্রস্তুতি আগেই শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটে প্রায় তিন হাজার নির্বাহী হাকিম ও কয়েক হাজার বিচারিক হাকিম নিয়োজিত থাকছেন। আর ভোটগ্রহণের দায়িত্বে সব মিলিয়ে থাকছেন প্রায় ৯ লাখ কর্মকর্তা। সঙ্গে আট লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য মোতায়েন হয়েছে।

দেশি পর্যবেক্ষক ২০ হাজার

২০ হাজার ৭৭৩ জন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এবার ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন ও স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জনকে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে। যারা কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, তাদের নামের তালিকা অনুমোদন করে কার্ড দিয়েছে ইসি সচিবালয়। আর যেসব সংস্থা স্থানীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, তাদের সংখ্যা ইসি অনুমোদন দিলেও নামের তালিকা ও পর্যবেক্ষক কার্ড দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর