জামানতও রক্ষা হয়নি শেঠের, একই পরিণতি ৮০% প্রার্থীর
৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সমঝোতার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ জামানত রক্ষা করতে পারেননি। ভোটের হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর ধারেকাছেও আসতে পারেননি শেঠ।
এটি চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও মহানগরীর একাংশ) আসনের ঘটনা। এ আসনের ফলাফলে দেখা গেছে, ১৮৪ কেন্দ্রে লাঙল প্রতীকে সোলায়মান আলম শেঠ পেয়েছেন মাত্র আট হাজার ২৩৫ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৬ শতাংশ।
শেঠের মতো চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে আরও ৯৫ প্রার্থী তাদের জামানত রক্ষা করতে পারেনি, যাদের অধিকাংশই ‘ছোটখাট’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোটের মাঠে এসেছিলেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১২৫ প্রার্থী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি ভোটের দু’দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তবে ব্যালটে তার নাম-প্রতীক রয়ে যায়।
নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, একটি নির্বাচনি এলাকায় যত ভোট পড়ে তার শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ কোনো প্রার্থী না পেলে মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ’আমাদের হিসেবে, ৯৫ জনের মতো প্রার্থী জামানতের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে কম পরিমাণ ভোট পেয়েছেন। তবে এটা আরও যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
নির্বাচন কর্মকর্তার হিসেব অনুযায়ী, ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ প্রার্থীই ভোটে তাদের জামানত রক্ষা করতে পারেননি।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরীর একাংশ) আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৩। ভোট দিয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৬২০ জন। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৩২২ ভোট। ভোটের হার ২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
মোট ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ হিসেবে জামানত রক্ষার জন্য সোলায়মান আলম শেঠের প্রয়োজন ছিল ১৬ হাজার ৯৫২ ভোট। তবে তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পেতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে বেসরকারিভাবে পাওয়া এই সংসদীয় আসনের ১৮৪টি কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট ও বিজয় কুমার চৌধুরী পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫০০ ভোট। এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল নবী ৫ হাজার ৯১৩, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ১ হাজার ৭, তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা ২৩৭, বিএনএফের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ১৫৯, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. কামাল পাশা পেয়েছেন ১২৭, কল্যাণ পার্টির মো. ইলিয়াছ পেয়েছেন ১০৬ এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহিবুর রহমান বুলবুল পেয়েছেন ৭০ ভোট। এ হিসেবে শেঠসহ ৮ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের মাহবুব রহমান রুহেল ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন শুধু জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন। আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৩। ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ১১৭ জন। জামানত রক্ষা করতে হলে ১৮ হাজার ১৩২ ভোট প্রয়োজন ছিল, যা রুহেল-গিয়াস ছাড়া বাকি ৫ জন প্রার্থীর কেউই পাননি। জিতেছেন নৌকার রুহেল।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আবু তৈয়ব শুধু জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন। জিতেছেন নৌকার সনি।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীর কেউই জামানত রক্ষা করতে পারেননি। জিতেছেন নৌকার মিতা।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও নগরীর আংশিক) আসনে নৌকার প্রার্থী এসএম আল মামুন ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর আংশিক) আসনে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীরই জামানত বাতিল হয়েছে। জিতেছেন জাতীয় পার্টির আনিসুল।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে নৌকার প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে লড়ে চার প্রার্থী জামানত খুইয়েছেন। একইভাবে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী হাছান মাহমুদের লড়ে ৫ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থীরই জামানত রক্ষা হয়নি।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম ছাড়া ৮ প্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পারেননি। জিতেছেন নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দি বাচ্চু।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন ছাড়া বাকি ৫ জনের জামানত রক্ষা হয়নি। জিতেছেন এম এ লতিফ।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একই দলের সামশুল হক চৌধুরী ছাড়া বাকি ৭ প্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পারেননি। জিতেছেন নৌকার মোতাহেরুল।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে লড়ে ৬ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একই দলের মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী ছাড়া বাকি ৬ জন প্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পারেননি। জিতেছেন নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মোতালেব এবং একই দলের নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ছাড়া ৫ জন জামানত হারান। জিতেছেন মোতালেব।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান এবং ট্রাক প্রতীকের আবদুল্লাহ কবির লিটন ছাড়া ৭ জন জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। কিন্তু ভোটগ্রহণ চলাকালে বাঁশখালী থানায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার দায়ে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থীতা বাতিল করে। এর ফলে মোস্তাফিজের ভোট গণনার আওতায় আনা হয়নি।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এনএস