ভোটে বিএনপির সহিংসতার মামলায় আসামি ৩০০, গ্রেফতার ১২
৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষের ঘটনায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ৩০০ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামির তালিকায় দুই শীর্ষ বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহর নাম আছে। এদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে নগরীর চান্দগাঁওয়ে সংঘর্ষের সময় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে রোববার হরতাল পালন করছিল বিএনপি। এর মধ্যে সকাল সোয়া ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নগরীর চান্দগাঁও থানার মৌলভী পুকুর পাড়ে আল হেকমত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে পাকা রাস্তায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায়-দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় এবং কেন্দ্রে আসার পথে ভোটারদের ওপরও হামলা করে। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাও হামলার শিকার হন।
পুলিশের ভাষ্যমতে, বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ করে এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। তাদের প্রতিরোধে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ৩১৭ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে জানান, সংঘাতের ঘটনায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গ্রেফতার ১২ জনকে সোমবার (৮ জানুয়ারি) আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার ১২ জন হলেন- রাকিবুল ইসলাম (২৫), আজিম উদ্দিন (২৫), মফিজুল আলী (২৫), মঞ্জুর আলী (৫০), মো. হেলাল (২২), মো. হোসাইন (৩৩), মো. মানিক (২৯), মো. মহিন (২১), মো. রিয়াদ (২২), মো. আজম (২০), মোবারক হোসেন (২০) এবং মো. মামুন (৩৫)।
পলাতক আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও নগর আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ এবং থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের মধ্যে মোশারফ হোসেন প্রকাশ ছোট মোশারফ, রিয়াদ, আফছার (২৮), আব্দুর রহমান আলফাজ, নওশাদ আল জাশেদুর রহমান, জামাল, হারুন, আরিফ, এরশাদ, রুবেল, রাশেদ, মনছুর, আসমান, নাসির উদ্দিন, আকবর বদি, ওসমান, তুষার, নুর হোসেন, মো. আরিফ, জয়নাল আবেদিন সাকিব, জুনায়েদ হোসেন জিনুক, মানিক, রুবেল, আমজাদ, আরিফ মহিউদ্দিন, ইরফান, নাজিম, হারুন, আনোয়ার হোসেন বাপ্পি এবং সেলিম।
পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন ওসি জাহিদুল কবীর।
ভোটকেন্দ্রে বিএনপির হামলা, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো এবং সহিংসতার ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সৈয়দ নুরুল হক নুরু। তিনি নিজেও আক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর ওয়েল পার্ক হোটেলে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনটা আনচ্যালেঞ্জড ছিল না। আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমরা মনে করি, দুটি পক্ষ সহিংসতায় জড়িত থাকতে পারে। একপক্ষ যারা আমাদের প্রার্থী কিংবা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং এ আসনে আমাদের নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় ছিলেন তাদের উদ্যোগে হতে পারে। অথবা যারা সারা বাংলাদেশে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে, তাদের কাজ হতে পারে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব, তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
একই আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হওয়া বিজয় কুমার চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে সকাল ১০টার পর থেকে কেটলি প্রতীকের আবদুচ ছালাম বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের মাধ্যমে বহদ্দারহাট থেকে মোহরা পর্যন্ত দফায় দফায় টায়ার পোড়ানো, পাথর নিক্ষেপসহ ভীতিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন এবং ভোটারদের জন্য ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করেন। এ পরিস্থিতিতে চান্দগাঁওয়ে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অসংখ্য ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকেন।’
সংঘাতময় পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকাও রহস্যময় ছিল বলে অভিযোগ করেন বিজয় কুমার চৌধুরী।
এদিকে আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা এবং ১২ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ বিবৃতি দিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর কমিটির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ