‘সবাইকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে হবে, সংঘাত চাই না’
৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা অনেককে নমিনেশন দিয়েছি। অনেকে হয়তো জয়ী হতে পারেন নাই। জনগণ ভোট দিয়েছেন এখানে করার কিছু নেই। সবাইকে অনুরোধ কারও বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ যেন না থাকে। সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থাটা ধরে রাখতে হবে। এখানে কোনো রকম সংঘাত দ্বন্দ্ব দেখতে চাই না।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর এক শুভেচ্ছা বিনিময় ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন ও টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের ধারাবাহিকায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন ওরা চক্রান্ত করেছিল। এই নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। আমরা কিন্তু বিকল্প পথ নিয়েছিলাম। আমরা নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চাইলে তাদেরও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। অন্যান্য বিরোধী দলও নির্বাচন করেছে। এ কারণে নির্বাচন নিয়ে আর বলতে পারবে না যে, রাতে সীল মেরেছে। কারণ রাতে ব্যালট পেপার যায় নাই। ব্যালট পেপার পৌঁছেছে সকালে।’
স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অনেককে নমিনেশন দিয়েছি। অনেকে হয়তো জয়ী হতে পারেন নাই। আমরা আশা করেছিলাম তারাও জয়ী হবেন। জনগণ ভোট দিয়েছে এখানে করার কিছু নেই। অনুরোধ করব কারও বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ যেন না থাকে। সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান ধরে রাখতে হবে। এখানে কোনো রকম সংঘাত ও দ্বন্দ্ব দেখতে চাই না। যা কিছু হয়েছে ইলেকশনের দিন পর্যন্ত। যেহেতু জনগণ ভোট দিয়েছেন, তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই এখানে কারও কোনো অভিযোগ অনুযোগ থাকার কথা না। কারণ জনগণের উপর আমাদের আস্থা বিশ্বাস রাখতে হবে। আর জনগণ ভোট না দিলেও তাদের কাছে যেতে হবে। তাদের জন্যই আমাদের কাজ করতে হবে। সেই কথাটা নেতাকর্মীদের যেন মনে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন এই নির্বাচন নিয়ে যারা বড় খেলা খেলতে চেয়েছিল তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এই ব্যর্থদের মধ্যে একটা প্রতিহিংসা জাগ্রত হয়। এখান যদি আপনারা কোথাও এতটুকু গোলমাল করেন, ওই সুযোগটা চক্রান্তকারীরা নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই জনগণের আস্থা বিশ্বাস আমাদের উপর আছে। আমরাও জনগণের উপর বিশ্বাস রেখেছি, আস্থা রেখেছি। কারণ আমরা যখন নির্বাচনে নমিনেশন দিয়েছি সঙ্গে সঙ্গে বলেছি, যে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। আমাদের পার্টির অনেক লোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আমার মনে হয়, কেউ এভাবে ইলেকশন উন্মুক্ত করে দেয়নি। দিলে আতঙ্কিত থাকত। আমি যদি সিট কম পাই, যদি সরকার গঠন করতে না পারি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের কিন্তু সেই ভয় ছিল না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি আরও বলেন, ‘জনগণ যা চাইবে তাই হবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট না দেয়, আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে না পারি কোনো দুঃখ নেই। ভোটের অধিকার জনগণের হাতে তুলে দিতে পেরেছি সেটাই আমাদের সব থেকে আনন্দের বিষয়।’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য বিএনপি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল। মুরুব্বিদের পরামর্শে চললে বাংলাদেশের আর চলা লাগবে না। এটাই হলো বাস্তবতা। যদি সৎ পরামর্শ হয়, সেটা ভালো কথা। নির্বাচন হতে দেবে না, এসব হুমকি-ধামকি গেল কোথায়?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি এবার নির্বাচন হতেই দেবে না। তাদের কিছু মুরুব্বি আছে তারাও সেই পরামর্শ দেয়। এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যাতে নির্বাচন না হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে তারা চেনে নাই। ৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এ দেশের মানুষ এটাই প্রমাণ করেছেন।’
সারাবাংলা/এনআর/এনএস