Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইএমএফ’র টার্গেট পূরণ সম্ভব নয়: অর্থমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৫

ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে টার্গেট দিয়েছে, তা কখনও পূরণ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির প্রাণবিন্দু, আমাদের মূল এলাকা যেগুলো আছে সেটা হচ্ছে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের রিজার্ভ ভালো অবস্থায় আছে। আমি দাবি করব ভালো।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।
আইএমএফ যে টার্গেট দিয়েছে তা পূরণ হয়নি-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ যে টার্গেট দিয়েছে, ওদেরটা কখনও পূরণ করা যাবে না। আইএমএফ কি টার্গেট দিয়েছে বলেন? ১২ দিনের ইনকাম হচ্ছে আমাদের লাইবেলিটি। আমাদের যে রেমিট্যান্স আসে সেই পরিমাণও তো আমরা লোন নিচ্ছি না, ১৩০ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমাদের কতো আছে, রেমিট্যান্স যা আসে আরও ডাবল করা যায়।

দেশের ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকিং খাতে আমরা রিফর্ম এনেছি। এই রিফর্মের কারণে এখনও জীবিত আছি আমরা। যদি আমাদের ৬-৯ সুদের হার না থাকতো। আমরা যদি আগের মতো সুদের হার ২২-২৪ শতাংশ রাখতাম, তাহলে এতদিন আমরা কোথায় চলে যেতাম, হারিয়ে যেতাম। দেশের অর্থনীতি হারিয়ে যেত দেশের মানুষ হারিয়ে যেত। কিন্তু আজকে আমরা সেই কাজটি করতে দেইনি। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এটা সম্ভব।

এখন তো আবার সুদের হার বাড়ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুদের হার বাড়ে যদি এটা একুমুলেট করতে পারে হোয়াই নট। আমরা একুমুলেট করতে পারতাম না, আমাদের ছোট ব্যবসায়ীরা, মাঝারি উদ্যোক্তারা এমনকি বড় উদ্যোক্তারা সবগুলো ছিল। আমরা সেগুলোকে রক্ষা করেছি।

পরে আমাদের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছিল, খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে সেজন্য আমরা এটাকে বাস্তব অবস্থার নিয়ে এলাম। আমরা সময় বাড়িয়ে খেলাপি হতে দেয়নি। দুই-একটা ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক লেনদেন লক্ষ্য করেছি। সেগুলো এবার থাকবে না আশা করছি।

১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন, এরপর নতুন কেবিনেট হবে সেটা কেমন দেখতে চান বা প্রত্যাশা কি? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালকে এমপিরা শপথ নেবেন, তারপর অন্য ধাপে যাবে। সে বিষয়ে এখন আলাপ করা ঠিক হবে না।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে আপনার এমন কোনো ইচ্ছা ছিলো কিনা যেটা আপনি পূরণ করতে পারেননি এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে অর্থনীতি শুরু করেছি সেভাবে থাকতে পারিনি। কারণ একটা পর একটা যুদ্ধ লেগেই রয়েছে। ফলে অর্থনীতির কোনো কিছু ধারণা করা যায় না। তারপরও আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের মাথাপিছু আয় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে চলে গিয়েছিলাম। এখন আমাদের ২৫/২৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। এবছর আমাদের চিন্তা হচ্ছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে না দেওয়া। এটা সম্ভব, আমরা আগে যা বলেছি সেটা ঠিক আছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য কোনো পরিকল্পনা করেছেন কিনা, বা নতুন সরকার কি পরিকল্পনা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, মাত্র নির্বাচন হলো, এমপিরা শপথ এখনও নেয়নি, নতুন সরকার গঠন হয়নি। তাই নতুন সরকার গঠনের আগে এসব বিষয়ে বলা ঠিক হবে না। তবে আমাদের অর্থনীতির যে এলাকা রয়েছে সেটা আটন মহিমায় উপরে উঠেছে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি আমাদের অর্থনীতি ৪১ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটা অর্জন করতে পারবো। আমরা বিশ্বাস করি ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০ টি উন্নত দেশের একটি হবে বাংলাদেম। যাকেই জিজ্ঞেস করবেন সেই বলবে বাংলাদেশ এগুচ্ছে, নিদিষ্ট সীমানা ও নিদিষ্ট রেখায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যদি আসে তাহলেতো তৈরি পোশাক খাতে প্রভাব পড়বে সে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোর করে কেউ কিছু করলে আমরা কি কিছু করতে পারি। কোনো অপরাধ করলে শাস্তি আছে, কিন্তু বাংলাদেশ কোনো অপরাধ করে নাই। অপরাধ করলে ধরা পরতো।

তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ যা বলে, সেটা তাদেরকে শিখিয়ে দেওয়া হয় না। গবেষণা করে তারা করে। পৃথিবীর যে সকল দেশগুলো ঋণ নিচ্ছে তাদের মধ্যে আমাদেন জিডিপি ৩৪ শতাংশ। যেটা পৃথিবীর মধ্যে লোয়েস্ট।

সিপিডির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যখন ক্ষমতা নেই তখন বলে দিয়েছে এপথে আইসেন না। তারা আমাদেরকে বার বার বলছিলো টাকার অবমূল্যারন করে দেন। এটা না করলে এক ঘণ্টাও টিকতে পারবেন না। আমরাতো টিকে আছি। বাজারে গেলে জিনিসপত্র কিনা যাচ্ছে, যারা বিক্রি করছে তাদের কিছু ফেরতও আসেনা। অর্থনীতি চালাতে গেলে অর্থনীতির জন্য মূল্যস্ফীতি প্রয়োজন আছে। যারা অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা করেনা তারা বলতে পারে মূল্যস্ফীতির প্রয়োজন নাই। মূল্যস্ফীতি ছাড়া অর্থনীতি চলতে পারে না। কয়েক দিন আমরা ৮ থেকে ১০ বছরের মতো মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখেছি। এন থেকে ভালো নম্বর আর হতে পারে না।

অর্থনীতি নিয়ে সামনের দিনগুলোতে সরকারের কি চ্যালেঞ্জ আছে বলে আপনি কি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামনের সরকার আসুক তখন সেটা বলা যাবে। ইত্যোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত বলেছেন, আগামীতে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনীতি, আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে হবে। গতিশীল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যাতে পথ না হারায় এটাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামীতে অর্থনীতিই হলো মূল চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যে চিন্তা করেন আমরাও একই চিন্তা করি‌ আমাদের আলাপ আলোচনা হয়। অর্থনীতির দুর্বল হলে সরকার কিভাবে টিকে থাকবে, আর দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে। আমি এখনও বলি আমরা ভালো অবস্থানে আছি।

সারাবাংলা/জেআর/এনইউ

অর্থমন্ত্রী টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর