Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ, সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৫

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ বুধবার (১০ জানুয়ারি)। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।

দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। মুক্তি পেয়েই তিনি লন্ডন যান। সেখান থেকে দিল্লি হয়ে মুক্ত ঢাকার মাটিতে অবতরণ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি। এ দিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি সকালে নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও দেশটির জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুও ভারতের নেতা ও জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে তিনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’

বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকা এসে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।

পররদিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবে লেখা হয়— ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দুচোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’

জনগণনন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদী বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’

সশ্রদ্ধ চিত্তে সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু। সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম, ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছ, তোমরা রক্ত দিয়েছ, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে, আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম— আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। মুসলমান একবার মরে, দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম— আমার যদি মৃত্যু আসে, আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাব না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব— জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর