Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে নতুন নির্বাচনের দাবি জোরদার হচ্ছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪০

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে কঠোর ভাষায় নতুন নির্বাচনের দাবি জোরদার হচ্ছে। বিশ্বের সমস্ত খ্যাতিমান পত্র-পত্রিকা, অনলাইন—ভিজুয়াল মিডিয়া নির্বাচনের নামে কী কেলেংকারি ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা, তা চিত্রসহ তুলে ধরছে প্রায় প্রতিদিন।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

রিজভী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন—হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের প্রায় সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন, অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ডেভিড শুব্রিজসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক—রাজনীতিকরা শেখ হাসিনার নির্বাচনকে কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে। নির্বাচন বাতিল করে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। তামাশার নির্বাচন বাতিল ও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ধ্বনিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদের জন্ম দিয়েছেন, আগামীতে দেশে জনগণের সরকার গঠিত হলে প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে। এই ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ডামি সরকারের এক ডামি মন্ত্রী বলেছেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করা হবে। এই কথার জবাবে আমি বলতে চাই, যে দেশে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি সরকার থাকে সেই দেশের অনিষ্ট করতে কোনো ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না।’

রিজভী বলেন, ‘বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানোর পর নজিরবিহীন উদ্ভট ডামি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে চালু হয়েছে এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা। গোটা বাংলাদেশ এখন তার হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়া মডেলের এই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ছিলেন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ ডামি, কেউ মনোনীত, কেউ নৌকা—সবাই তার প্রার্থী। কোন আসনে কে পাশ, কে ফেল— সব তার হাতে পূর্বনির্ধারিত।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘২৮ পারসেন্ট থেকে ৪১ পারসেন্ট ভোট কাউন্ট করার ফর্মূলাও তার। যদিও ভোটার উপস্থিতি ছিল মাইক্রোস্কোপিক। সুতরাং শেখ হাসিনার এক হাতের মুঠোয় যে সব কিছু, তাতে প্রমাণ হয় বিশ্বের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের নতুন মডেল হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রতারণা, শঠতা, মিথ্যাকে যদি কোনো শিল্প ধরা হয়, তাহলে শেখ হাসিনা সেই শিল্পের নিপুণ কারিগর। তার এই নব উদ্ভাবিত বাকশালের লেটেস্ট ভার্সনকে গোটা দেশসহ বিশ্ববাসী ছুঁড়ে ফেলেছে।’

রিজভী বলেন, ‘একজন ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সার কারণে দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উধাও হয়ে গেছে। মানুষের ভোটের অধিক লুন্ঠন করা হয়েছে। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণই শুধু নয়, বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এখন বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছে। গতকাল ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন যৌথ বিবৃতি দিয়ে গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলেছে।’

‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এবারের নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের কাছে ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতোই অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়নি। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দল এবং দেশের প্রায় প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষ ৭ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে। এরপরও নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি, ২০১৮ সালের মতো রাতের বেলায় ব্যালটে সিল মারার মতো অপকর্মের আশ্রয় নিতে হয়েছে— আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীরাই এই অভিযোগ করেছেন’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সত্য, ৭ জানুয়ারির ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন নতুন প্রজন্মের সামনে ৭৩ সালের নির্বাচনের জাল জালিয়াতি আর সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, ভোট ডাকাতি মনে হয় আওয়ামী লীগের বংশানুক্রমিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে ডামি সরকার অবৈধ ক্ষমতার উষ্ণতা অনুভব করলেও দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতে কাঁপছে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষ যেখানে একবেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে কীভাবে শীতবস্ত্র জোগাড় করবে? অথচ ডামি মন্ত্রীরা কী খেয়ে মন্ত্রিত্ব উদযাপন করবেন, পত্র-পত্রিকায় সেই তালিকা প্রকাশ হচ্ছে।

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

রুহুল কবির রিজভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর