Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাজ করছে না কীটনাশক, লেটব্লাইট রোগে মরছে আলুগাছ

মো. শামীম কাদির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৯

জয়পুরহাট: আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাটে এবার আলুক্ষেতে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে লেটব্লাইট (নাবীধ্বসা) রোগ। ফলে বারবার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও গাছ বাঁচাতে পারছেন না কৃষকরা। ৪ দিন পর পর তারা জমিতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। তারা বলছেন, আগের মতো কীটনাশক কাজ করছে না। বারবার ক্ষেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে।

সবজাতের আলু ক্ষেতেই এবার দেখা দিয়েছে এই রোগ। আলু রোপণের দেড় থেকে ২ মাস পর কাণ্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, আবহাওয়ার কারণে এবার আলু ক্ষেতে রোগ বেশি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেও আলুক্ষেত বাঁচাতে পারছি না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার কৃষকরা ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করেছেন। যার মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে কৃষকরা এবার অধিক উৎপাদনের আশায় বেশি দাম দিয়ে কিনে উন্নত জাতের আলু বীজ বপণ করেছেন।

এছাড়া সার, সেচ ও কীটনাশকের দামও বেশি। ফলে গত বছরের তুলনায় আলু চাষে এবার বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার বেশি খরচ পড়েছে। কিন্তু বীজ বপণের দেড় থেকে দুই মাস পর আলু গাছে এবার ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। ভালো ক্ষেতে হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে কাণ্ড ও পাতা মরা রোগ। দ্রুত গাছ মরে যাচ্ছে। আবার পাতা কালো হয়ে যাচ্ছে। গাছ বাঁচাতে কৃষকরা চার দিন পর পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন। তাতে মড়ক কিছুটা কমলেও পুরোপুরি ভালো হচ্ছে না।

কৃষকরা বলছেন, আগের মতো কীটনাশক কাজ করছে না। বারবার ক্ষেতে স্প্রে করতে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেতের গাছ মরে গেছে। আবার মড়ক থেকে ক্ষেত বাঁচাতে অনেক কৃষক দুই মাস বয়সের আলু তুলে বিক্রিও করছেন। জেলার সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, কালাই উপজেলার হারুঞ্জা, ভাবকী ও খুঞ্জিয়াপাড়া এবং ক্ষেতলাল উপজেলার তেলাবদুল, তালশন, ভাশিলা ও মামুদপুর এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে আলু ক্ষেতের এমন চিত্র দেখা গেছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক জাতের উন্নত বীজ কিনে তিনি আলু চাষ করেছেন। বর্তমানে আলু গাছের বয়স দেড় মাস। কিন্তু পুরো ক্ষেতেই মড়ক দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে তিন বার ছত্রাকনাশক স্প্রে করে কিছুটা মড়ক কমেছে। তবে পুরোপুরি রোগ সারেনি। এজন্য প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হচ্ছে।’

ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শতকে চার মণ হারে আলু উৎপাদন হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু যেভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে এবার আলুর উৎপাদন অনেক কম হবে। বারবার স্প্রে করেও গাছের রোগ ভালো হচ্ছে না।’

ক্ষেতলাল উপজেলার তালশন গ্রামের কৃষক জামির উদ্দিন বলেন, ‘৬ বিঘা জমি পত্তন (লিজ) নিয়ে আলু চাষ করেছি। কিন্তু পাতামরা রোগ দেখা দেওয়ায় ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ব্যারাম কিছুতেই ভালো হচ্ছে না।’

সমন্তাহার গ্রামের কৃষক মোকাব্বের আলী বলেন, ‘মামুদপুর মাঠে দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করার এক মাস পর ক্ষেতে রোগ দেখা দেয়। একবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সবগুলি গাছ মরে গেছে। ওষুধ স্প্রে করারও সুযোগ পাওয়া যায়নি।’

বেলগাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘এবারের মতো কোনো বার আলু ক্ষেতে রোগ দেখা দেয়নি।’

আলুক্ষেতে রোগের কথা স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ অফিসার এনামুল হক বলেন, ‘বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আশা করছি এতে ফলনে কোনো প্রভাব পড়বে না।’

সারাবাংলা/এমও

আলু আলু উৎপাদন আলু রোপণ আলুগাছ কীটনাশক ছত্রাকনাশক লেটব্লাইট রোগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সালমান শাহ্‌কে হারানোর ২৮ বছর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪

সম্পর্কিত খবর