চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালেয় চালু হয়েছে ’প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক’। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রেঞ্জ ডিআইজি নুরে আলম মিনা প্রবাসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার নিয়ে সজাগ থাকার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
নগরীর খুলশিতে রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে এ ডেস্ক, যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সহায়তা ডেস্কগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি করা হবে।
২৪ ঘণ্টা সক্রিয় এ ডেস্কের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের পারিবারিক সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, দেশে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সমস্যা ও হয়রানির বিষয়ে সব ধরণের সহায়তা পাবেন। প্রবাসে বসেই বাংলাদেশিরা সরাসরি ফোন কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, টেলিগ্রাম, ম্যাসেঞ্জারসহ নানা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডেস্কের সঙ্গে যোগাযাগ করতে পারবেন।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে উদ্বোধনের পর প্রবাসী সিআইপি ও বাংলাদেশ কমিউনিটি সংগঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডিআইজি। এতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, মোজাম্বিক, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী সিআইপি ও বাংলাদেশ কমিউনিটি সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বৈধ পথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর সারাবিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে এনআরবি সিআইপি নির্বাচিত করে।
মতবিনিময় সভায় ডিআইজ নুরে আলম মিনা বলেন, ‘প্রবাসে বসে অনেকে দেশকে নিয়ে অনেক অপপ্রচার করেন। ফেসবুক, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডায় লিপ্ত হয়। আমাদের সাধারণ প্রবাসী ভাইয়েরা অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে এতে লাইক-কমেন্ট দেন, শেয়ার করেন। আমি সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে বলব। সবাই যেন একটু ভেরিফাই করে লাইক-কমেন্ট কিংবা শেয়ার করেন।’
সভায় কয়েকজন প্রবাসী বিদেশ থেকে হুন্ডি ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া ইমিগ্রেশনে হয়রানির বিষয়েও কথা বলেন।
জবাবে ডিআইজি বলেন, ‘হুন্ডি, বিকাশ, নগদ যে আমাদের ক্ষতি করছে, এটা তো রিজার্ভ দেখলেই বোঝা যায়। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয় দেখবে। পুলিশের পক্ষে বেশি কিছু এক্ষেত্রে করা সম্ভব নয়। আর ইমিগ্রেশনে শুধু সিল মারা পুলিশের কাজ। এখানে আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। কয়েকদিন আগে পুলিশ সদর দফতর থেকে আমাদের প্রত্যেক ইউনিটে চিঠি দিয়ে প্রবাসীদের সব কাজে সহায়তা ও গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং পুলিশের শীর্ষপর্যায়ও এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।’
প্রবাসীদের অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে যুগান্তকারী অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারপরও দেশে রেমিটেন্স যোদ্ধারা অবহেলার শিকার হবেন, প্রবাসে বসে পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা বা দুষ্টচক্রের দ্বারা অর্জিত জমি-সম্পত্তি আত্মসাতের অপচেষ্টার খবরে উদ্বিগ্ন থাকবেন, দেশে এসে হয়রানির শিকার হবেন, আইনগত বিষয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরবেন-তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। প্রবাসীদের সহযোগিতার নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই সহায়তা ডেস্কের কার্যক্রম চালু হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ‘মর্যাদাপ্রাপ্ত প্রবাসী সিআইপিদের নিবন্ধিত সংগঠন এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারের কল্যাণে ভূমিকা রাখছে। একইভাবে প্রবাসী সিআইপিরা বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রা, সেক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রবাসীরা প্রত্যাশা করেন, দেশে সর্বপর্যায়ে তারা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ন্যায্য সহযোগিতা পাবেন এবং কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হবেন না।’
‘বর্তমান সরকারের আমলে আমরা প্রবাসীদের স্বার্থে বেশকিছু পদক্ষেপ দেখেছি। আমাদের আমাদের সংকটে পুলিশকেও এখন পাশে পাচ্ছি। বর্তমান ডিআইজি যখন পুলিশ সুপার ছিলেন, তখন তিনি বেশকিছু উদ্যোগ প্রবাসীদের পক্ষে নিয়েছিলেন এবং ডেস্ক স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সেটি এখন দেশের অনেক স্থানে হয়ে গেছে। প্রবাসীবান্ধব নীতি দেশের অগ্রযাত্রায় সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ব্যবস্থাপনা) রওশন আরা রবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) প্রবীর কুমার রায়, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও প্রবাস বিষয়ক কনসালটেন্ট এজাজ মাহমুদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি কাতারের সম্পাদক নুর মোহাম্মদ, এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান, প্রবাসী সিআইপি ও কুয়েত কমিউনিটি সংগঠক আবুল কাশেম বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া ওমানপ্রবাসী আবদুল করিম ও কবির আহমেদ এবং কমিউনিটি সংগঠক নুর মোহাম্মদ ও পর্তুগাল প্রবাসী সাজিন আহম্মেদ কৌশিকও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী সিআইপিদের মধ্যে হাফেজ মোহাম্মদ ইদ্রিস, শওকত আলী সোহাগ, দিদারুল ইসলাম, পারভেজ মোহাম্মদ আমানউল্লাহ চৌধুরী, সাফফাত বিন আজাদ, মোহাম্মদ মোরশেদ, এমরান হোসেন, মোহাম্মদ জামাল, আবদুল মান্নান, নাসির মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।