Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৬০০ নেতার ৬৩ জন কারাগারে, বাকিরা কোথায়?

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৬

ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে— এমনটিই দাবি করে আসছিল বিএনপি। নির্বাচনের দিন দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, বিএনপির ১৩ হাজার ৪২৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪৯৯ মামলার এফআইআরে দলটির ৫২ হাজার ৩৪২ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

সবশেষ গতকাল শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কারাবন্দি নেতাদের যে তালিকা দিয়েছেন সেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬৩ জনের নাম রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তাদের মধ্যে আছেন— দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী; ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু ও আব্দুস সালাম পিন্টু; চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, হাবিবুর রহমান হাবিব ও আতাউর রহমান ঢালী; যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন ও লায়ন আসলাম চৌধুরী; মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন; এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন— প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পদাক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। সহ-সম্পাদকদের মধ্যে কারাগারে আছেন— সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পদাক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-গ্রামসরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ চাঁদ, সাইয়েদুল ইসলাম বাবুল, শেখ রবিউল আলম রবি, আবুল হোসেন খান ও ফজলুর রহমান খোকনও কারাগারে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন, সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া নুরুদ্দীন অপু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি আমির এজাজ খান, দিনাজপুরের দুলাল হোসেন, জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গুলজার হোসেন, ফেনির শেখ ফরিদ উদ্দিন বাহার, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়জিদ হোসেন পলাশ, গাইবান্ধার মাহমুদুন নবী টিটুল, পিরোপুরের লাভলু গাজী, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ফরহাদ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু ইউসুফ টিপু, রংপুরের মাহফুজুন্নবী ডন, পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব খন্দকার মাকসুদুর রহমান মাসুদ, ব্রহ্মণবাড়িয়ার সিরাজুল আসলাম, ফরিদপুরের এ কে কিবরিয়া, শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, নড়াইলের মনিরুল ইসলাম, মেহেরপুরের আমজাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা, যুবদলের সহসভাপতি ইউসুফ বিন জলিল (মির্জা কালু), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক সহসভাপতি গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল সিকদার এই মুহূর্তে কারাগারে রয়েছেন।

এই ৬৩ জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাত্র ২৮ জন। বাকি ৩৫ জন্য মহানগর, জেলা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা। অথচ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সংখ্যা প্রায় ছয় শ। এদের মধ্যে জাতীয় নিরর্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্য মিলে ৫০২ জন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৭৩ জন এবং দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছেন ১৪ জন।

এই ছয় শ জনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান; ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও নিতাই রায় চৌধুরী; চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক; সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী; এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ছাড়া বাকিদের আন্দোলনের সময় দেখা যায়নি। সব মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির এত নেতা গেল কোথায়?

দলের চেয়ারপারসন এবং স্থায়ী কমিটির এক নম্বর সদস্য খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাজনীতির বাইরে। স্থায়ী কমিটির দুই নম্বর সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ১৬ বছর ধরে লন্ডনে রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির তিন নম্বর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি। স্থায়ী কমিটির পাঁচ নম্বর সদস্য ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার ও ১০ নম্বর সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থতার কারণে রাজনীতির বাইরে রয়েছেন।

স্থায়ী কমিটির ১১ নম্বর সদস্য মির্জা আব্বাস, ১৫ নম্বর সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ১৬ নম্বর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে কারাগারে। ১২ নম্বর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আছেন আত্মগোপনে। স্থায়ী কমিটির ১৮ নম্বর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির ১৯ নম্বর সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ গত ৯ বছর ধরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে আছেন।

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন স্থায়ী কমিটির যেসব ভার্চুয়াল বৈঠক হয় সেখানে তারেক রহমান, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ যুক্ত থাকেন। আত্মগোপনে থাকা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মাঝে মাঝে যুক্ত হন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ৭৩ জন উপদেষ্টার মধ্যে মৃত্যু এবং দল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই মুহূর্তে পদে আছেন সারোয়ারি রহমান, রিয়াজ রহমান, মুশফিকুর রহমান, এ জে মোহাম্মদ আলী, কবির হোসেন, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, ইঞ্জিনিয়র আ ন হ আখতার হুসেইন, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন ভি পি, মনিরুল হক চৌধুরী, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, নুরুল হুদা (চাঁদপুর), সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমী, আবদুল হালিম, এম এ কাইয়ুম, শহীদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রশীদ, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, অধ্যাপক তাজমিরী ইসলাম, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, আব্দুর রেজ্জাক খান, রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, ফজলুর রহমান (কিশোরগঞ্জ), হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নাজমুল হক নান্নু, তাহমিনা রুশদি লুনা, ড. ইনামুল হক চৌধুরী, ডা. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আবদুল হক (সিলেট), আফজাল এইচ খান, কামরুল মুনির, বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল বায়েছ ভুঁইয়া, আফরোজা খান রীতা, আবদুস সালাম (ঢাকা মহানগর), ময়নুল ইসলাম শান্ত, মো. শাহজাদা মিয়া, এসএস ফজলুল হক, কর্নেল (অব.) এম এ লতিফ, ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস, সৈয়দ আলমগীর হোসেন ও আমিনুল হক। কিন্তু বিএনপির আন্দোলনে জয়নুল আবদিন ফারুক ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি।

অবশ্য এদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, হাবিবুর রহমান হাবিব ও আতাউর রহমান ঢালী এই মুহূর্তে কারাগারে রয়েছেন। আর সারোয়ারি রহমান ও রিয়াজ রহমান অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে আছেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে মৃত্যু ও দল ছেড়ে যাওয়ার পর এই মুহূর্তে পদে আছেন আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর নাসির, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আবদুস সালাম পিন্টু, ড. ওসমান ফারুক, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী ও গিয়াস কাদের চৌধুরী। কিন্তু আন্দোলনের সময় ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও নিতাই রায় চৌধুরী ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। অবশ্য এদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুস সালাম পিন্টু কারাগারে রয়েছেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাত যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, লায়ন আসলাম চৌধুরী কারাগারে। বাকি তিনজন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, হারুন-অর-রশিদ বাইরে থাকলেও আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের দেখা যায়নি। তবে মাঝে-মধ্যে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়েছেন হাবীব-উন-নবী খান সোহেল।

এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন (ঢাকা), মাহবুবুর রহমান শামীম (চট্টগ্রাম) রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (রাজশাহী), অনিন্দ্য ইসলাম অতিম (খুলনা), আসাদুল হাবিব দুলু (রংপুর) ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন (সিলেট), এমরান সালেহ প্রিন্স (ময়মনসিংহ), বিলকিছ জাহান শিরিন (বরিশাল) ও শামা ওবায়েদকেও (ফরিদপুর) আন্দোলনের সময় মাঠে দেখা যায়নি। এদের মধ্যে অবশ্য এমরান সালেহ প্রিন্স ২৮ অক্টোবরের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন। আর মাঝে-মধ্যে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নিজ জেলা যশোরে নিজের অনুসারীদের নিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছেন।

এ ছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, সহ-সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার সংখ্যা আরও চার শতাধিক। চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় এদের বেশির ভাগই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ব্যাপক হারে ধরপাকড় ও পুলিশি হয়রানির কারণে সেভাবে রাজপথে নামতে পারেননি বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থকেরা।

বিএনপির এ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। জেল-জুলুম-হুলিয়া আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল নেতাদের একটি অংশ কৌশলগত কারণে নেপথ্য থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সময় হলেই তারা প্রকাশ্যে আসবেন।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

আন্দোলন বিএনপি বিএনপি নেতা বিএনপির আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর