হার-জিত যাই হোক, দোষারোপ বন্ধ করতে হবে: শেখ হাসিনা
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪১
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ বন্ধ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এগুলো বন্ধ করে বরং দেশের কল্যাণে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সদ্য টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী অপরাধ, সেগুলো খুঁজে বের করা বন্ধ করতে হবে। হার-জিত যেটাই হোক, দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা যদি এখন দোষারোপ করি আর একে অন্যের দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকি, এটা কিন্তু আমাদের যারা বিরোধী দল তাদেরই আরও উৎফুল্ল করবে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় শেখ হাসিনা নিজেই সভাপতিত্ব করেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এদিনই প্রথম বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন তিনি।
আরও পড়ুন- ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে জনগণের কল্যাণে’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর বাংলাদেশকে কেউ দুর্ভিক্ষের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ হিসাবে মনে করে না। তারা মনে করে, বাংলাদেশ একটা উন্নয়নের রোল মডেল। অথচ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের নিজেদের এবং তাদের ঘিরে কিছু মানুষের উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু তারা এ দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন করেনি। বাংলাদেশের মানুষ সেই তিমিরেই রয়ে গেছিল।
১৯৭৫ সালের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ আবার উন্নয়নের পথে ফিরতে শুরু করে বলে উল্লেখ করেন শেখ হসিনা। এ সময় তিনি তার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলের বিভিন্ন আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই ষড়যন্ত্রগুলো মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করেছি। এখানে আমি একটা কথা বলব— আমরা নির্বাচনে সবসময় নমিনেশন দেই। এবারও আমরা নমিনেশন দিয়েছি। কিন্তু আমাদের দল অনেক বড়। অনেকেই নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু সবাই তো নমিনেশন দেওয়া সম্ভব না। তাই নির্বাচনটা আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। যারা করতে চায়, করুক।
নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার কারণেই এবার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের দলীয় প্রার্থীর বাইরে দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবার জয় পেয়েছেন। তাদের কাছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীসহ জোটের আসন সমঝোতায় লাঙ্গল প্রতীক পাওয়া জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরাও হেরে গেছেন। ভোটে জিতে আসা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রায় সবাই-ই আওয়ামী লীগ নেতা।
এ প্রসঙ্গেই ভোটে হার-জিতের হিসাব না করে এবং হারের জন্য পারস্পরিক দোষারোপ না করে মানুষের কল্যাণে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, আমরা জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি, সেটা কিন্তু আমাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। কারণ দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। সে জন্যই মানুষ কিন্তু আমাদের ভোট দিয়েছে, জয়ী করেছে। তাই দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই দল ইলেকশন করে না। এরা তো গণতান্ত্রিক পরিবেশে ইলেকশন করে অভ্যস্ত না। যেসব সার্ভে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হয়েছিল তাতে স্পষ্ট ছিল যে বিএনপি তার জোট নিয়ে নির্বাচন করলে কখনো সরকার গঠন করার মতো সাফল্য অর্জন করবে না। একমাত্র আওয়ামী লীগই এককভাবে সরকার গঠন করার মতো পর্যাপ্ত সিট পাবে বলে জরিপে উঠে এসেছিল। এ কথা শোনার পর তারা ইলেকশনে আসবে না, সেটা তো খুব স্বাভাবিক।
‘তাছাড়া ওদের সৃষ্টিই হয়েছে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তাদের পকেট থেকে। তাই তারা শুধু জানেই ক্ষমতায় বসে নির্বাচন করতে,’— বলেন শেখ হাসিনা।
যৌথসভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর