সূর্যমুখী প্রদর্শনী প্লট যেন বিনোদন কেন্দ্র!
১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৩
মেহেরপুর: কৃষিসমৃদ্ধ জেলা মেহেরপুর। এ জেলায় প্রায় সবধরণের ফসল ফলে। এবার জেলায় রবিশস্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলতে জেলার একমাত্র তৈলবীজ খামার আমঝুপিতে এর চাষ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পালন করা হয়েছে মাঠ দিবস। অনেকেই আসছেন পরামর্শ নিতে।
সরেজমিনে আমঝুপি বিএডিসি’র সূর্যমুখী ফুলের খামারে গিয়ে দেখা গেছে, দু’চোখ যতদূর যায় শুধু ফুলের সমারোহ। এ যেন হলুদ আর সবুজের মিলন মেলা। প্রকৃতির মাঝে এমন সৌন্দর্য পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে এসে খুশি দর্শনার্থীরা। ঘুরে ঘুরে দেখছেন সূর্যমুখী ফুলের সমারাহ। এমন সৌন্দর্যে ছবি ও ঘুরতে পেরে বেশ খুশি তারা। অন্যদিকে দর্শনার্থীদের পদচারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সূর্যমুখী বাগান, চলছে নাটকের শুটিংও।
সূর্যমুখী ক্ষেত দেখতে আসা ভাটপাড়ার সোহেলী ও আকতার জানান, লোকমুখে শুনেছি এখানে সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত আছে। সুন্দর দৃশ্য তাই লোভ সামলাতে না পেরে এখানে ছবি তুলতে এসেছি। বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে সেলফি তোলা ছাড়াও ঘোরাঘুরি করা হচ্ছে। বেশ ভাল লাগছে।
নাটোর থেকে পিকনিকে আসা পর্যটকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা মুজিবনগরে এসেছিলেন। এখানে সুর্যমুখীর বাগান আছে, আর তা দেখতে সুন্দর জেনে বেড়াতে এসেছেন তারা।
অনেক টিকটকার জানান, এর আগে সূর্যমুখী ফুলের নাম শুনেছেন কিন্তু সামনাসামনি দেখেননি। সোস্যাল মিডিয়ায় এই বাগান দেখে এখানে এসেছেন তারা।
শুধু দেখতেই সুন্দর এমন নয়, ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি শরীরের কোলস্টোরেল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে তৈলবীজ খামারে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে এবার এ খামারে ২২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জেলায় আরও ২৭ বিঘা জমিতে এর চাষ করা হয়। মাঠ জুড়ে এখন হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। অনেকেই দেখার পাশাপাশি এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন।
গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বি ডি দাস বলেন, ‘সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের মানসিক চাপ দূর করে। এককথায় সূর্যমুখী তেলে মানবদেহের মহাওষুধ হিসাবে ভূমিকা পালন করছে।’
মেহেরপুর বিএডিসি’র উপ-পরিচালক আবু তাহের জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার-কীটনাশক কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। এছাড়া অন্য তেলবীজ যেমন সরিষার, তেলের চেয়ে তেলও বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে সূর্যমুখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে বিদেশ থেকে এর আমদানি কমে যাবে। এটি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে।
তিনি আরও জানান, প্রতি একর জমিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় ও অফিসের সামনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সূর্যমুখী ফুল চাষ করে থাকেন। কিন্তু সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত।
সারাবাংলা/এমও