ঘন কুয়াশায় আলুর জমিতে লেট ব্লাইটের শঙ্কা
১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২১
রংপুর: মিজানুর রহমান। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক। এবার পাঁচ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। গতবারের মতো এবারও ঘন কুয়াশার কারণে আলুর লেট ব্লাইট রোগে বেশ ক্ষতি হয়েছে। একে তো তীব্র শীত তার উপরে কুয়াশায় ফসলহানি। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়েও ফসলহানি ঠেকাতে পারেননি। এ কারণে আলু নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তিনি।
মিজানুর রহমানের মতো ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা। মাঠভরা আলু বাঁচাতে চড়া দামে বারবার কীটনাশক কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। একই অবস্থা উপজেলার চতরা ইউনিয়নের সুরুজ মিয়া, বাদল আলী ও ফারুক আলীরও। তাদের মতো ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন শত শত আলুচাষি।
সাধারণত লেট ব্লাইট প্রতিরোধে ফসলে একবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। সেখানে প্রতি সপ্তাহে কীটনাশক ছিটিয়েও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না কৃষকরা। বারবার কীটনাশক কিনতে খরচ বাড়ছে। কৃষকরা বলছেন, লেট ব্লাইট দেখা দিলে এক রাতেই পুড়ে যেতে পারে পুরো ক্ষেত। তবে আলুর রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ কৃষি বিভাগের। আর আবহাওয়া অফিস বলছে, এ অবস্থা থাকবে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রিয়াজ উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, শৈত্য প্রবাহে আলুর তেমন একটা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে কুয়াশা দীর্ঘ মেয়াদী হলে আলুর গাছ লেটব্লাইট রোগে আক্রান্ত হবে। এতে গাছের পাতা লালচে বর্ণ ধারণ করবে। পাতা ও ডগায় পচন ধরে গাছগুলো নষ্ট হবে।
আলুচাষি মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘লেট ব্লাইট এমন এক রোগ, যদি কোনো আলুক্ষেতে এই রোগ দেখা দেয় তাহলে মুহূর্তেই পুরো ক্ষেত নষ্ট করে ফেলে। তখন পুরো মৌসুমের পরিশ্রম মাটি হয়ে যায়। লেট ব্লাইট যেন না হয়, সেজন্য বাজার থেকে চড়া দামে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেছি। কিন্তু খুব বেশি কাজ হয়নি।’
রংপুর নগরীর মীরগঞ্জ এলাকার আলুচাষি তারেক মিয়ারও একই অবস্থা। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘বছর দুয়েক আগেও যখন আলু আবাদ করতাম তখন লেট ব্লাইট প্রতিরোধে একবার কীটনাশক স্প্রে করলেই হতো। কিন্তু রংপুরে যে পরিমাণ কুয়াশা তাতে জমির ক্ষতির আশঙ্কা করছি। প্রতি সপ্তাহেই কীটনাশক ছিটিয়েও শঙ্কা কাটছে না।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রংপুরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে কুয়াশাও। তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। তবে সামনে শীত কমলেও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকবে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।’
তিনি বলেন, ‘১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কুয়াশা অনেকখানি কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাতের তাপমাত্রা কিছুটা নেমে গেলেও মানুষের মাঝে তীব্র শীতের যে অস্বস্তিকর অবস্থা তা থাকবে না। কারণ সকালের দিকে সূর্যের দেখা মিললে দিনের তাপমাত্রা বাড়বে।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রংপুরে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি।’ তবে এই কৃষি কর্মকর্তার দাবি, কৃষকদের পরিশ্রম আর কৃষি বিভাগের পরামর্শের কারণে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর প্রায় ৫৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।
সারাবাংলা/পিটিএম