প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: হাইকোর্ট
১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৫
ঢাকা: প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হতে পারে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আট পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।
আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. সগীর হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুল রাফেল।
রায়ে আদালত বলেছেন, মামলাটি তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব সৃষ্টি না করে এখনও তদন্তাধীন থাকায় আমরা বলতে পারি যে, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগগুলো সত্যিই অত্যন্ত গুরুতর। মাননীয় প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। তাই এই ধরনের হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হতে পারে।
রায়ে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত আবেদনকারী (মির্জা ফখরুল) দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছেন, যাকে তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন দাবি করে আসছেন। দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে কথিত ওই ভোটাধিকারের দাবি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত হয়েছে। যাতে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, কথিত আন্দোলনকারীরাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা এসব অযৌক্তিক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা বিবেচনায় নিয়েছি, যেগুলো দৃশ্যত দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বস্তুত দেশ ও দেশের জনগণকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রায়ে আদালত আরও বলেছেন, আবেদনকারী বিপর্যয়কর ও উচ্ছৃঙ্খল এসব ঘটনার পরিকল্পনাকারী এবং এসব ঘটনায় মির্জা ফখরুলের কোনো ভূমিকা ছিল কি না, সে বিষয়ে কেবল সুষ্ঠু তদন্তের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তদন্তের ন্যায্যতা নিশ্চিতে এই পর্যায়ে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া সহায়ক হবে না বলে আমরা মনে করি।
এই মামলার কয়েকটি ধারা আছে যা জামিন অযোগ্য বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে মির্জা ফখরুল কোনো অসুস্থতায় ভুগলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি রায়ে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর জামিন চেয়ে গত ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। রুলে মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুলের আইনজীবীদের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য ৩ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেন। সেদিন মির্জা ফখরুলের আইনজীবীর পক্ষে সময়ের আরজি জানানো হয়। আদালত ওই সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১০ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ