Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাঠে ফিরতেও পশ্চিমাদের দিকে তাকিয়ে বিএনপি

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৯

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আপাতত নীরব আছে বিএনপি। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো সরকারের ওপর চড়াও হলে ফের মাঠে ফিরবে বিএনপি। ভিসানীতি, স্যাংশন বা অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করলে বিএনপিও হরতাল-অবরোধ এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেবে।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর ওপর খুব বেশি ভরসা করতে পারছেন না তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের হম্বি-তম্বি, ইরোপীয় ইউনিয়নের ডিপ্লম্যাটিক থ্রেটের ওপর ভরসা করে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় ছয় দিন হরতাল, ১৩ দফায় ২৬ দিন অবরোধ এবং ১৪ দফায় ২৮ দিন লিফলেট বিতরণ এবং ভোট গ্রহণের ১৭ দিন আগে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েও নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি দলটি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যতগুলো অস্ত্র ছিল, তার সবগুলো প্রয়োগ করেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিত নাড়াতে পারেনি তারা।

এমন পরিস্থিতে হরতাল-অবরোধ এবং অসহযোগ আন্দোলন থেকে সরে এসে বিএনপি এখন অপেক্ষায় আছে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো কী ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করে, সেটি দেখার জন্য। দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক নেতা-কর্মী এখনও বিশ্বাস করে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা। পাশাপাশি ভিসানীতি, স্যাংশন এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে ‘নত’ হতে বাধ্য করবে তারা।

দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনের আগে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রত্যেক নেতা-কর্মী, সমর্থকের বিশ্বাস ছিল, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো বিএনপির দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করে দেবে। বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশে নির্বাচন হতে দেবে না তারা। নির্বাচন হলেও সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না আওয়ামী লীগের পক্ষে। সরকার গঠন করতে পারলেও নতুন সরকার বেশি দিন ঠিকবে না। বিদেশি শক্তিগুলো আওয়ামী লীগকে টিকতে দেবে না।

কিন্তু, তাদের এসব প্রত্যাশানির্ভর অনুমান ভুল প্রমাণ করে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশে। নির্বাচনের পর দ্রুততার সঙ্গে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের শপথের পালা শেষে প্রথম অধিবেশনের তারিখও চূড়ান্ত করেছে ফেলেছে সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। মন্ত্রিদের দফতরও বণ্টন হয়েছে যথা সময়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, অতি মাত্রায় বিদেশ নির্ভরতাই বিএনপিকে ডুবিয়েছে। দলটি যেভাবে পশ্চিমাদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল, পশ্চিমারা সেভাবে বিষয়টি দেখেনি। ফলে পুরো বিষয়টি বিএনপির জুন্য বুমেরাং হয়েছে। দলটি বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে রাজপথকে প্রাধান্য দিলে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ভালো হত। বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে আওয়ামী লীগকে ‘শায়েস্তা’ করার নীতি বিএনপির জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে।

দলীয় সূত্রমতে, এত কিছুর পরও বিএনপি আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই তাকিয়ে থাকবে। কারণ, যে হাঁক-ডাক দিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেছিল, সেটা এখন ভোঁতা হয়ে গেছে। এখন আর হরতাল-অবরোধ দিয়ে বা অসহযোগের ভয় দেখিয়ে সরকারকে কাবু করা যাবে না। গত ১৫ বছরে যা হয়নি, আগামী পাঁচ বছরেও তা হবে না। অধিকন্তু সরকারকে কাবু করতে সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিলে বিএনপিকেই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে। বহির্বিশ্বের কাছে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাবে।

বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, সুশাসন— এগুলো কথার কথা। মূল বিষয়টা হচ্ছে ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার লড়াইয়ে বিএনপি হেরে গেছে। দলটির আপাতত কিছুই করার নেই। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন বিএনপি আর হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ আন্দোলনে যাবে না। গণসংযোগ, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলের মতো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করে যাবে। তবে পশ্চিমারা যদি সরকারের ওপর খড়গহস্ত হয়, তাহলে বিএনপি সেই সুযোগ নিতে ভুল করবে না। যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা তো দেখতেই পাচ্ছেন পশ্চিমা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো ৭ জানুয়ারির একতরফা ডামি নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরিষ্কার করে বলেছে, নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সবদল অংশগ্রহণ না করায় তারা হতাশ। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) পরিষ্কার করে বলেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মান পূরণ হয়নি।’

‘সুতরাং, এক তরফা ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক বিশ্বের মূল্যায়ন ও পদক্ষেপ অবশ্যই বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করার সময় বিএনপি এ বিষয়গুলো মাথায় রাখবে’— বলেন ড. মঈন খান।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

নির্বাচন পশ্চিমা বিএনপি ভিসানীতি মাঠ যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর