বৈচিত্র্যময় স্বাদ-গন্ধের সমাহারে পিঠা উৎসব মোংলায়
১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৯
মোংলা (বাগেরহাট): পিঠার নামে জিভে পানি আসে না— এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে শীতের সময় পিঠাপুলি বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিছেদ্য অংশ। শীত নামতে নামতে তাই গ্রামেগঞ্জেও পড়েছে বাহারি স্বাদ আর রঙের পিঠা তৈরির ধুম। সেই পিঠাকে ঘর থেকে বের করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই মোংলা উপজেলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নে হয়ে গেল পিঠা উৎসব। ঘরের আপ্যায়নের মতোই আপ্যায়ন মিলেছে এই পিঠা উৎসবে।
মুখরোচক সব পিঠার ঘ্রাণে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারী) সকাল থেকে শুরু হয় এই পিঠা উৎসব। বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের কালী বাড়ী, বৈরাগখালী ও বাটারাবাদ গ্রামের মানুষরা হাজির হন এই উৎসবে। চিতই পিঠা, দুধ চিতই, ভাপা পিঠা, তেলের পিঠা, তেজপাতা পিঠা, মুঠি পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা ও সিঁয়াই পিঠার স্বাদে সারাদিন মেতেছিল উপস্থিত সবাই।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে পিঠার স্বাদ নিতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারও মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই উৎসব। এদিন সকালে সারিবদ্ধভাবে চুলা বসিয়ে বুড়িডাঙ্গা গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারীরা পিঠা তৈরি শুরু করেন। পরে সবাই একত্রিত হয়ে বসে পিঠা খাওয়া শুরু করেন। পরে কুইজের মাধ্যমে সেরা পিঠা তৈরি করা নারীদের দেওয়া হয় পুরস্কার। ভবিষ্যতে পিঠা উৎসবের এই আয়োজন পুরো জেলায় ছড়িয়ে দিতে চান আয়োজকরা।
সাত বছর ধরে এই পিঠা উৎসব হচ্ছে জানিয়ে আয়োজনের সহযোগী বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে এখন আর গ্রামে-গঞ্জে সেভাবে পিঠা উৎসব হয় না। অন্তত এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি, এটিই বড় কথা।
পিঠাশিল্পী তৃষ্ণা বিশ্বাস, মিতা সরদার, তনুশ্রী বিশ্বাস, শিখা রায় ও প্রিয়া ঘোষাল বলেন, কালের গভীরে অনেক ধরনের পিঠা হারিয়ে গেলেও অনেক পিঠাই রয়ে গেছে। শীতে শুধু গ্রামবাংলাই নয়, শহর এলাকাতেও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই পিঠা উৎসব পালন করা হয়। যতক্ষণ লোকজন এসেছেন, ততক্ষণ পিঠা বানানো হয়েছে এবং সবাইকে পিঠা পরিবেশন করা হয়েছে।
আয়োজকরা বলেন, একসময় দেশে শত শত নামের ধান ছিল। পিঠার ধরনেরও অন্ত ছিল না। বৈচিত্র্যময় সেসব পিঠা ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। পিঠাপুলি নিয়ে কবিতা-গান-ছড়ারও কমতি নেই। পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে সেই পিঠার ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ুক— সেটিই প্রত্যাশা আয়োজকদের।
সারাবাংলা/টিআর