ফেরিডুবি: কর্তৃপক্ষ বলছে ধাক্কা, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিন্ন কথা
১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৯
মানিকগঞ্জ: কর্তৃপক্ষ বলছে বাল্কহেডের ধাক্কায় পদ্মায় ফেরি রজনীগন্ধা ডুবে গেছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, কোনো ধাক্কায় ফেরিটি ডুবেনি। তলদেশে ছিদ্র হয়ে একা একাই ফেরিটি কাত হয়ে পদ্মায় ডুবে গেছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে পাটুরিয়া ঘাটে সরেজমিনে এমন তথ্য মিলেছে।
পাটুরিয়া ঘাটে এসে প্রত্যক্ষদর্শী, ঘাটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তীব্র কুয়াশা উপেক্ষা করে রাত একটার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ৯টি ট্রাক নিয়ে ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা পাটুরিয়া ঘাটে আসছিল। ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে আসামাত্রই ঘাট কর্তৃপক্ষ নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এসময় রজনীগন্ধা পাটুরিয়া ৫নং ঘাটে পৌঁছানোর আগেই মাঝনদীতে নোঙ্গর করে রাখে।
ফেরিতে থাকা চামড়া ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরিটি ডুবে যায়নি। যারা এটা বলছে বলে বেড়াচ্ছে তারা সত্য বলছে না। সকাল ৬টার দিকে মাঝনদীতে নোঙ্গর করা আমাদের ফেরিটি আস্তে আস্তে কাত হয়ে নদীতে ডুবে যায়। যখন ডুবে যায় তার আশপাশে কোন বালু বহনকারী বাল্কহেড কিংবা অন্য কোন নৌযান ছিল না। ফেরির তলদেশে লিকেজ হয়ে পানি উঠে আস্তে আস্তে ফেরিটি ডুবে যায়। তখন বাঁচার তাগিদে বাঁচাও বাঁচাও করে নদীতে লাফ দেই। পড়ে একটি ট্রলার এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
ফেরিতে থাকা আরেক প্রত্যক্ষদর্শী চামড়া ব্যবসায়ী ফজর আলী বলেন, ‘সকাল ভোরবেলা আমরা সবাই জাগনা ছিলাম। উপর থেকে একজন চিৎকার করে বলছে ফেনিতে পানি উঠছে। নোঙ্গর ছেড়ে ফেরিটিকে ঘাটে নেওয়ার জন্য সবাই চিৎকার করতে থাকেন। তখন ফেরিটি চালু না করায় আস্তে আস্তে একদিকে কাৎ হয়ে ফেরিটি ডুবে যায়। পরে আমরা ফেরি থেকে লাফ দিলে একটি ট্রলার এসে আমাদের উদ্ধার করে পাটুরিয়া ঘাটে নিয়ে যায়।’
তবে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ডি জি এম খালেদ নেওয়াজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মাঝ পদ্মায় নোঙ্গর করে রাখা রজনীগন্ধা ফেরিটিকে একটি বালুবাহী বাল্কহেড সজোরে ধাক্কা দেয়। এসময় আস্তে আস্তে ফেরিটি ডুবে যায়। ফেরিসহ ভেতরে থাকা ছোট বড় মোট ৯টি ট্রাক নদীতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। ট্রাক চালক হেলপার, ব্যবসায়ী, ফেরি মাস্টারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়। তবে ফেরির দ্বিতীয় মাস্টার হুমায়ুন কবীর নিখোঁজ রয়েছেন।
তবে ফেরিডুবি সম্পর্কে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, কিভাবে ফেরিটি ডুবে গেছে সেটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তারাই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। প্রাথমিকভাবে হামজা ও রুস্তম নামের দু’টি উদ্ধারকারী জাহাজ কাজ করবে। ইতিমধ্যে হামজা এসেছ। রুস্তম মাওয়া থেকে রওনা দিয়েছে। এই দু’টি জাহাজ দিয়ে ফেরিতে আটকে পড়া ট্রাকগুলো উদ্ধারে কাজ করা হবে। তবে ফেরি উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পাঠানো হবে।
এদিকে ফেরিডুবির ঘটনায় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি বিআইডব্লিউটিএ’র এবং অপরটি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের। দু’টি তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য বলা হয়েছে।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ঘটনাস্থলে এলেও উদ্ধার তৎপরতা এখনও শুরু হয়নি।
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ৫নং ফেরিঘাট এলাকায় ৯টি ট্রাকবোঝাই রজনীগন্ধা নামের ইউটিলিটি ফেরিডুবির ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: পাটুরিয়ায় ৯টি ট্রাকসহ ফেরি ডুবি, ৬ জনকে উদ্ধার
সারাবাংলা/এমও