Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভোটকেন্দ্রে কেউ গেলে তাকে প্রতিহত করার নির্দেশ দিইনি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নির্বাচনের দিন নগরীর চান্দগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং ভোটকেন্দ্রে হামলা ও ভোটারদের বাধা দেওয়ার ঘটনায় বক্তব্য এসেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কাছ থেকে। নগর কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে কেউ এলে তাকে প্রতিহত করার কোনো নির্দেশনা নগর বিএনপি দেয়নি।

তবে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাকে দায়ী করার পাশাপাশি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চান্দগাঁওয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন শাহাদাত।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শাহাদাত। মূলত নির্বাচনের দিন চান্দগাঁওয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

গত ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওতাধীন চান্দগাঁও থানার মৌলভী পুকুর পাড় থেকে সিএন্ডবি মোড় পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের দফায়, দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ, সড়কে অগ্নিসংযোগ, ভোটার আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত কেটলি প্রতীকের পোস্টার লাগানো তিনটি ইজিবাইক খালে ফেলে দেয়া এবং ওই এলাকায় আল হিকমাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মহিলা ভোটকেন্দ্র ও আয়েশা-মঞ্জু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কমপক্ষে ৩০০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। ভোটকেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষের ঘটনায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ১২ জনকে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান এবং নগর আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ’র নাম আসামির তালিকায় আছে।

সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত হোসেন দাবি করেছেন, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রঘোষিত হরতালের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেছিল। এতে পুলিশ বাধা দেওয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই আওয়ামী লীগ নেতা বিজয়ী আবদুচ ছালাম ও বিজয় কুমার চৌধুরী উভয়ই সেদিনের সহিংসতায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। দুই নেতার পক্ষ থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

অন্যদিকে, মামলার আসামি হওয়া দুই বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, চান্দগাঁওয়ে ভোটের দিন কর্মসূচি পালনের কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত বিএনপির ছিল না। মুখচেনা কিছু কর্মী-সমর্থক কেন এ ঘটনায় জড়ালেন সেটা তদন্ত করার কথা বলেছিলেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহ ছিলেন না। শাহাদাতের কাছে প্রশ্ন ছিল, বিএনপির নেতাকর্মীদের কেউ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন কি না ?

জবাবে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমাদের সেদিন কেন্দ্রীয়ভাবে হরতাল ছিল। হরতালে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার জন্য সারা বাংলাদেশে…। আমরা কাউকে বলিনি যে, নির্বাচনে ভোট সেন্টারে কেউ আসলে তাকে আমরা প্রতিহত করবো। আমরা বলেছি, নির্বাচন বয়কট করুন, এ ধরনের একটি অগণতান্ত্রিক নির্বাচনে আপনারা যাবেন না, বরং না গিয়ে বর্জনের মাধ্যমে এ নির্বাচনকে আপনারা ‘না’ বলুন। আমাদের বক্তব্যে বারবার এটা বলেছি, লিফলেটে কিন্তু এটা লেখা আছে। কোথাও কোনো জায়গায় নির্বাচন প্রতিহত করার কথা আমরা বলিনি।’

‘কিন্তু অতীতে যত আন্দোলন হয়েছে, হরতালে মিছিল হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। আমরা নিজেরাও সেদিন এনায়েত বাজার এলাকায় মিছিল করেছি। মিছিল করার সাংবিধানিক অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু মিছিল করে কাউকে মারার নির্দেশ আমাদের ছিল না। কিন্তু যখন তারা গণতান্ত্রিক মিছিল করেছে, সেখানে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বাধা দিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনকে প্রতিহত কর, কাউকে মারধর কর- এটা আমরা কখনও বলিনি।’

‘চান্দগাঁওয়ের মানুষ একাত্তরের চেয়েও বেশি সংকটে আছে’

সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেন, চান্দগাঁওয়ের ঘটনায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, নগরের আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, নগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন এবং নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি নওশাদ আল জাসেদুর রহমান ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহমান আলফাজসহ ২০০-২৫০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অথচ এসব নেতারা কেউ কর্মসূচিতে ছিলেন না।

চান্দগাঁও শরাফত উল্লাহ পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বাড়িতে ছিলেন। তাকে ২০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ক্যাশিয়ার মো. হারুনকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

‘মিথ্যা’ মামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশ চান্দগাঁও এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দিনে-রাতে যে কোনো সময় নেতাকর্মীদের ধরতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। সবচেয়ে অমানবিক হচ্ছে, মামলার আসামির তালিকায় নাম আছে এমন কাউকে না পেলে তাদের বাবা-ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মামলার আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে, কিন্তু আত্মীয়স্বজনকে থানায় ধরে নেয়ার অধিকার তাদের কে দিয়েছে ?’

শাহাদাত চান্দগাঁওয়ের ঘটনায় সঠিক তদন্ত এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।

‘ভোট বর্জনের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর নীরব প্রতিবাদ’

চট্টগ্রামের তিনটি আসনে নির্বাচনের নিজস্ব বিশ্লেষণ তুলে ধরেন শাহাদাত হোসেন।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ আসনে এম এ লতিফ এবং জিয়াউল হক সুমন দুজনই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। সেখানে জালসহ ভোট পড়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।’

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী) আসনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং এম মনজুর আলম দুজন শক্ত প্রার্থী থাকার পরও ভোট পড়েছে ২৬ শতাংশ।’

কিন্তু চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকার পরও ৩৬ শতাংশ ভোট কিভাবে পড়ল, সেই প্রশ্ন তোলেন শাহাদাত।

‘এ থেকে বোঝা যায়, যেখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না, সেখানে জাল ভোটের মহড়া হয়েছে। এভাবে ভোটের পার্সেন্টেজ বেশি দেখানো হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের কাছে জাল ভোটই এখন একমাত্র সম্বল ‘- বলেন শাহাদাত হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন ও কাজী বেলাল উদ্দিন, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, মাহবুব আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আনোয়ার হোসেন লিপু, মো. কামরুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক জাহিদুল করিম কচি, দফতরের দায়িত্বে থাকা নেতা ইদ্রিস আলী ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর