Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দিনভর বৃষ্টিতে শীত জেঁকে বসেছে যশোরে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১৩

ছবি: সারাবাংলা

যশোর: গত কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতায় যশোরের জনজীবন বিপর্যস্ত। এর মধ্যেই আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস সত্যি করে যশোরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। দিনভর বৃষ্টিতে শীত আরও জেঁকে বসেছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করলেও বৃষ্টির দাপটে বেড়েছে দুর্ভোগ আর কষ্টের মাত্রা।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যশোরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এরই মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি, যা পরে মাঝারি বৃষ্টিপাতে রূপ নেয়। বৃষ্টি চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। এরপর দিনভর থেমে থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এদিন যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সীমা পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টি শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। কনকনে ঠান্ডা অনুভব হয়েছে সারাদিন। এমন শীত আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।

জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় যশোরের ওপর দিয়ে। এর মধ্যেই শুরু হলো বৃষ্টি। এর প্রভাবে দিনভর কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে ঠান্ডা বাতাস গৃহহীন বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য আরও বেশি দুর্ভোগ বয়ে আনে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে পথে-ঘাটে থাকা এই মানুষগুলোর ভোগান্তি চরমে ওঠে। যশোরে রেলস্টেশন ও ফুটপাতগুলোতে এসব মানুষকে কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকতে দেখা গেছে। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদেরও কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে শীত আর বৃষ্টির যৌথ আক্রমণে।

যশোর শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একে তো তীব্র শীত, তার ওপর আবার বৃষ্টি। দুয়ে মিলে স্বাভাবিক কাজকর্ম থমকে আছে। সকাল থেকে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়ায় দুর্ভোগ দেখছি। অফিসের লোকজনদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

শহরের মুজিব সড়কে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী সফিয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোরে শীতের সঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে বাতাস তো আছেই। বৃষ্টি ও শীতের কারণে রিকশা-ইজিবাইকেও চলতেও কষ্ট হচ্ছে।’

রহমান নামে এক পথচারী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই চরম ঠান্ডা। আজকে বৃষ্টি হওয়ায় আরও বেশি ঠান্ডা লাগছে। হাত-পা শীতল হয়ে গেছে। গরম কাপড়ের সঙ্গে হাত মোজা, পায়ের মোজা পরেও ওম মিলছে না।’

আক্কাস আলী নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘তিনটা শার্ট, দুইটা প্যান্ট আর মোজা পরছি। মাফলার-টুপি দিয়ে কান-মুখ ঢেকে রেখেছি। তাও শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছি। একটা ট্রিপ দিলেই হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে এত শীতের মধ্যেও বের হতে হয়েছে।’

এদিকে শীতের প্রকোপে রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুদের চাপও বেড়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭০-৮০ শতাংশই শীতজনিত কারণে অসুস্থ। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। আবার শীতজনিত কারণে মারা গেলেও পরিসংখ্যান ওইভাবে করা সম্ভব হয় না। কারণ শীতের কারণেই রোগীদের অ্যাজমা সমস্যা বাড়ে, কাশি বাড়ে, জ্বর থেকে নিউমোনিয়া হয়। কিন্তু মারা গেলে এসব রোগই শনাক্ত করা হয়। তখন তা শীতজনিত কারণে বলা সম্ভব হয় না।’

এদিকে বিত্তহীনদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম বলেন, জেলার অসহায় ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য ৬১ হাজার কম্বল বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ৭৫ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সরকারি কম্বল ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কম্বল বিতরণ করছে। তবে তার পরিমাণ অনেক কম। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনকে শীতার্ত মানুষের মাঝে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সারাবাংলা/টিআর

টপ নিউজ তীব্র শীত বৃষ্টিপাত যশোর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর