শিক্ষামন্ত্রী নওফেল সংবর্ধনা না নিয়ে নিজেই গেলেন নেতাদের বাসায়
১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার চট্টগ্রামে এলেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে সংবর্ধনার নামে হয়নি জনসমাগম কিংবা হাজারো মানুষের ভিড়-হৈ-হুল্লোড়। নিজেই ইচ্ছায় নীরবেই বাসায় পৌঁছলেন তরুণ মন্ত্রী। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সংবর্ধনা না নিয়ে বরং নিজেই যাচ্ছেন নেতাদের বাসায়।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীতে পৌঁছে প্রথমেই দামপাড়ায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় যান মন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি ফিরিঙ্গিবাজারে নগর কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও নগরীর আন্দারকিল্লায় নগর আওয়ামী সাধারণ সম্পাদ ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বাসায় যান। এরপর নগরীর চশমাহিলে নিজ বাসায় পৌঁছান মন্ত্রী।
জানা গেছে, সংবর্ধনার নামে কেউ যাতে অহেতুক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে না পারেন, সেজন্য চট্টগ্রামে আসার বিষয় নেতাকর্মীদের তেমন কাউকে জানাননি নওফেল। তবে ঘনিষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ জানার পর শুভেচ্ছা জানানোর আয়োজন করতে চাইলে তিনি নিরুৎসাহিত করেন। নেতাকর্মীরা যাতে ভিড় না করেন, সেজন্য বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন এড়িয়ে তিনি সড়কপথে ঢাকা থেকে আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কাজ শেষ করেই সরাসরি চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন শিক্ষামন্ত্রী।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাজার, হাজার মানুষ জড়ো হবে, ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে, ভিড় হবে, যানজট হবে আর সাধারণ মানুষকে অহেতুক বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, এমন আয়োজনের পক্ষে আমি নই। অবশ্যই আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের আবেগ আছে, আমি সেই আবেগকে সম্মান করি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, মন্ত্রী হিসেবে আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটার পূর্ণ কৃতিত্ব আমাকে বা আমাদের যারা ভোট দিয়েছেন তাদের।’
‘জনগণের রায় না পেলে হয়তো আমার পক্ষে এ দায়িত্ব পালন সম্ভব হতো না। এজন্য আমার বিনীত অনুরোধ, এই মুহূর্তে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা বা সংবর্ধনা নয়, আসুন আমাকে ভোট দিয়ে যারা নির্বাচিত করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষা।’
নিজেই নেতাদের বাসায় যাবার বিষয়ে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অনেকেই আমার পিতৃতুল্য নেতা। উনারা আমার পিতার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন। উনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহচর। চট্টগ্রামে উনাদের নেতৃত্বেই আমরা রাজনীতি করি। নির্বাচনে উনাদের দোয়া-আশীর্বাদ এবং সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে আমি উনাদের দোয়া নিতে গিয়েছিলাম।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে এসেই নওফেল প্রথমে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে গিয়েছিলেন।
জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার চট্টগ্রামেই কাটাবেন শিক্ষামন্ত্রী। এ দু’দিন তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। নিজ নির্বাচনি এলাকার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনবেন ও সমাধানের চেষ্টা করবেন।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করবেন। এরপর সেখানেও তিনি সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দিনও দফায় দফায় ফুলেল শুভেচ্ছা না নেওয়ার ব্যতিক্রমি নজির সৃষ্টি করেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ জারি করে মন্ত্রীকে কোনো ধরনের ফুলেল শুভেচ্ছা না জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন কেউ দায়িত্বে এলেই কর্মকর্তা-কর্মচারি, সমিতি-ফোরামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি এ ধারা চলতে থাকে দুই-তিন মাস পর্যন্ত। এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সাধারণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়ে আলোচনায় আসেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথমবার নির্বাচিত হওয়া এ তরুণ সাংসদকে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এবার তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম