গ্যাস সংকটে দিনভর জ্বলেনি চুলা, সড়কে নেই অটোরিকশা
১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে চট্টগ্রামে। বন্দর নগরীতে দিনভর কোনো বাসাবাড়িতে জ্বলেনি চুলা। ফলে নগরবাসীকে নির্ভর করতে হয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁর ওপর, সেখানেও গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। অনেকেই মাটির চুলা ব্যবহার করে করছেন রান্না।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত ২টা থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। একই সময়ে চট্টগ্রামেও গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল থেকেই গ্যাস না থাকায় খাবার হোটেলগুলোতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা গেছে সবাইকে। বলা যায়, খাবারের সংকটেই পড়ে গেছে চট্টগ্রামের মানুষ। সেই সংকট পুঁজি করে বেশি দামে খাবার বিক্রির অভিযোগও উঠেছে।
আরও পড়ুন- এলএনজি টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটি, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
এদিকে চট্টগ্রামের কাফকো, সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস নেই ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ছয় লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগে।
চট্টগ্রামের বন্দরের সল্টগোলা এলাকার বাসিন্দা মুবিন তুষার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে সামান্য হলেও গ্যাস ছিল। কিন্তু মধ্যরাতে তাও চলে যায়। সকাল থেকে কিছুই রান্না করা যায়নি। রাইস কুকারে ভাত রান্না করে হোটেল থেকে তরকারি কিনে এনে খেতে হয়েছে। সুযোগ বুঝে হোটেল মালিকরাও বেশি দাম নিচ্ছে। শুনেছি আগামীকালও (শনিবার) নাকি গ্যাস আসবে না।’
হালিশহর এলাকার বাসিন্দা তানভীর ইলাহী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই মাস ধরে হালিশহর এলাকায় গ্যাসের সংকট। আগে কোনোমতে দুই বেলা গ্যাস পাওয়া যেত। এখন একদমই নেই। উপায় না দেখে বিকেলে মাটির চুলা কিনে এনে রান্না করতে হয়েছে।’
পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা ড্যানি বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমাদের এখানে গ্যাসের সংকট। রাতে পাওয়া গেলেও দিনে পাওয়া যেত না। এখন তো একদমই নেই। সকালে থেকে হোটেলের খাবার কিনে এনে সবাই খাচ্ছি।’
এদিকে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরীর ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাস মিলছে না। প্রায় প্রত্যেক সিএনজি স্টেশনের সামনে গ্যাসের জন্য অপেক্ষমাণ অটোরিকশার দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এ কারণে সড়কে কমে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল। বাস দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ নিয়ে ভোগান্তি ছিল তুলনামূলক কম।
কেজিডিসিএলের বিপণণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (দক্ষিণ) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলএনজি টার্মিনালে টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।’
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কেজিডিসিএলের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালের একটি কন্ট্রোল ইউনিটে ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। এর কোনো স্থায়ী সমাধান না হলে চট্টগ্রাম বার বার এরকম গ্যাস সংকটে পড়বে।’
এদিকে শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এলএনজি রূপান্তরের টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজি রূপান্তরের একটি ভাসমান টার্মিনালে (এলএনজি এফএসআরইউ) কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অতি দ্রুত মেরামতের কাজ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের অন্যান্য এলাকায় শীতের কারণে গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারক করছে। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/আইসি/টিআর