পাটুরিয়ায় শঙ্কার মুখে ফেরির উদ্ধার কাজ, পারবে কি ‘প্রত্যয়’?
২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৬
মানিকগঞ্জ: অবশেষে ডুবে যাওয়া ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ উদ্ধারে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়ে’র দেখা মিলেছে। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়নি সে। দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনে সারাদিন উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম এবং হামজা কার্যত উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ রেখেছিল।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রত্যয় শনিবার থেকে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেবে। ডুবন্ত ফেরিটি উদ্ধারের মূল ভরসা উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। তবে উদ্ধার তৎপরতায় গতি না থাকায় ফেরি উদ্ধারের বিষয়ে শঙ্কায় রয়েছে খোদ কর্তৃপক্ষই।
পাটুরিয়া ঘাটে সরজমিনে দেখা গেছে, পদ্মায় ডুবন্ত রজনীগন্ধা ফেরি এবং ভিতরে থাকা ট্রাকগুলো উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই। শুধুমাত্র নৌ বাহিনীর ডুবুরি দলকে উদ্ধার তৎপরতায় দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার ফেরিডুবির ঘটনা ঘটলেও শুক্রবার পর্যন্ত মাত্র তিনটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৬টি ট্রাক এখনও ফেরির ভেতর নিমজ্জিত অবস্থায় আছে।
এছাড়া ফেরির সেকেন্ড ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের সন্ধানও গত তিন দিনেও পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মুখে মুখে উদ্ধার তৎপরতার কথা বলে গেলেও বাস্তবে উদ্ধারের সেরকম লক্ষণ দেখা যায়নি পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়। শুক্রবার সকাল থেকে সারাদিন উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম ফেরি কিংবা ট্রাক উদ্ধার তৎপরতায় নামেনি।
ফেরিডুবি: কর্তৃপক্ষ বলছে ধাক্কা, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিন্ন কথা
ফেরি উদ্ধার নিয়েও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অনেকেই বলছেন, ৫০ ফুট পানির নিচ থেকে ফেরিটি উত্তোলন করা সহজ হবে না। যেখানে ফেরির ভেতরে থাকা ট্রাকগুলো উদ্ধার করতেই হামজা এবং রুস্তম পিছপা হয়েছে, সেখানে প্রত্যয় দিয়ে ডুবন্ত ফেরি উদ্ধার করা কঠিন।
পাটুরিয়া ঘাটসংশ্লিষ্ট অনেকেই জানিয়েছেন, উদ্ধার তৎপরতায় গতি নেই। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম এবং হামজা দিয়ে পদ্মার গভীর তলদেশ থেকে ফেরি উঠানো অবাস্তব বলে তারা মনে করছেন। ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে তিনটি ট্রাক উদ্ধার করতেই ৩ দিন পেরিয়ে গেছে কম সক্ষমতার এই দু’টি জাহাজের। দুর্ঘটনার পর থেকেই ঢিমেতালে চলছে উদ্ধার তৎপরতা।
শুক্রবার দুপুরে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালেও তারা উদ্ধার তৎপরতায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অংশ নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পদ্মায় ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরিটির ওজন কমপক্ষে আড়াইশো টন। তিন দিন ধরে পানির নিচে ডুবে থাকায় ফেরির ভিতরে পলিমাটি জমে ওজন কমপক্ষে আরও ১০০ টন বেড়ে গেছে। পানির নিচে থাকা অবস্থায় কমপক্ষে সাড়ে ৩০০ টন ওজনের এই ফেরি উদ্ধারের সক্ষমতা প্রত্যয়ের রয়েছে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয় কেউই!
জানা গেছে, প্রত্যয়ের সক্ষমতা রয়েছে ২৪০ টন। এ অবস্থায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর পানি থেকে ফেরিটি উদ্ধার করা কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, ‘উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সক্ষমতা ২৫০ টন। আর ফেরিটির ওজন ২৪০ টন। ফেরিটি পানির নিচে থাকায় ওজন আরও বেড়ে গেছে। যার কারণে প্রত্যয় দিয়ে উদ্ধার চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যমে পরিকল্পনা করা হচ্ছে কিভাবে ফেরিটি তোলা যেতে পারে। যেহেতু পানিতে ফেরিটি নিমজ্জিত হয়ে আছে সেহেতু ভেতরে আগে বাতাস দিতে হবে। আর যদি কোনো ফাটল থাকে তাহলে তা কোন কাজে আসবে না। আগে ফাটল আটকাতে হবে। পরবর্তীতে বেলুন দিয়ে ফেরির ওজন কমিয়ে হালকা করতে হবে।’
গত মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে আসা ৯টি ট্রাক নিয়ে রজনীগন্ধা নামের ইউটিলিটি ফেরি পাটুরিয়া ঘাটের কাছে ডুবে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ডুবন্ত ফেরির আশপাশ থেকে পণ্যবাহী তিনটি ট্রাক উদ্ধার করেছে জাহাজ হামজা ও রুস্তম। এখনও নিমজ্জিত ফেরির ভেতর আরও ৬টি ট্রাক রয়েছে।
এদিকে, দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ূন কবীরের সন্ধান শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্তও মেলেনি। তিনি ২০০১ সালে ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হিসেবে যোগদান করেন। গত সাত মাস তিনি পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন।
সারাবাংলা/এমও
পাটুরিয়া পাটুরিয়ায় ফেরিডুবি প্রত্যয় ফেরি ফেরিডুবি রুস্তম হামজা