শীতে হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা
২০ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নবজাতক ও শিশুরা। বন্দরনগরীতে শহরের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের শিশুরা। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আসছে শিশু রোগী।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপই এখন বেশি। এক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের ঠান্ডা খুব তাড়াতাড়ি কাবু করে, পরে সেটা নিউমোনিয়ায় রুপ নেয়। নবজাতক ও শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরাও। শিশুদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা এড়াতে বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে চমেক হাসপাতালে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর রীতিমতো ভিড় তৈরি হয়েছে। এদের অধিকাংশই শিশু। শুধু বহির্বিভাগে নয়, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ৭০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে ১৪৩ শিশু রোগী। সেখানে নতুন করে শনিবার ভর্তি হয়েছে ৪৮ শিশু, যাদের বেশিরভাগের বয়স ৪০ দিন থেকে শুরু করে ছয় মাস পর্যন্ত। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা ১১। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫ জনের সিট থাকলেও সেখানে ভর্তি আছে ৮০ শিশু।
সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়ন থেকে পাঁচ মাস বয়সসী শিশুকে নিয়ে চারদিন আগে চমেক হাসপাতালে এসেছেন রাবেয়া বেগম। প্রচণ্ড শীতে তার কন্যা শিশুর জ্বর ও খিঁচুনি উঠে যাওয়ায় মধ্যরাতেই স্বামীকে নিয়ে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা কমপ্লেক্সে যান। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠান।
রাবেয়া বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামে অনেক শীত। ঠান্ডা লেগে আমার বাচ্চার খিঁচুনিসহ জ্বর ওঠে। হাসপাতালে ভর্তির পর কিছুটা ভালো আছে।’
৬০ বছরের বৃদ্ধা কুলসুমা আক্তার তার নাতিকে নিয়ে পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জন্মের একমাস পর থেকে আমার নাতির বুকে ঠান্ডা লেগেছিল। কান্না করতে তার কষ্ট হত। এখানে আনার পর একটু ভালোর দিকে। তবুও আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকব। নাতি পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে এখানে রাখব।’
এক বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালের বেডে আছেন কৃষ্ণা রাণী দাশ। তার স্বামীও দুইদিন ধরে হাসপাতালে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার (১৭ নভেম্বর) রাতে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। সে কাশতে কাশতে বমি করে দেয়। ভালো করে শ্বাস নিতে পারে না। কফ বেশি। আর বুকের দুধও খেতে পারছে না। জ্বর আগের চেয়ে কমেছে একটু।’
এদিকে স্বাভাবিক সময়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকলেও বর্তমানে সেটা আরও বাড়ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই একমাস থেকে ছয় মাস বয়সী শিশু। ঠান্ডা লাগার পর হাসপাতালে আসতে দেরি করার কারণে অনেক শিশুর অবস্থা জটিল হয়ে পড়ছে। তাই শিশুদের জ্বর সর্দি হলে কোনোভাবে অবহেলা করার সুযোগ নেই। শিশুদের ঠিকমতো যত্ন নিলে এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এটি জটিলও হয়ে যেতে পারে।
চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেবিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ ছয় মাস বয়সী শিশুরা বেশি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরে খারাপও হচ্ছে বেশি। যত ছোট তত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। ৪০-৪২ দিন, দুই মাস, চার মাস বয়সী বাচ্চারা শীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নিউমোনিয়ার সঙ্গে অন্যন্য সমস্যাও পাচ্ছি আমরা। জন্মগতভাবে যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদেরও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।’
চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান এ কে এম রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে অন্যান্য সময় যত শিশু রোগী আসতো, শীতের প্রকোপে জানুয়ারির শুরু থেকে তার দ্বিগুণের বেশি আসছে। প্রতিদিন যেখানে ৩০ থেকে ৪০টি শিশু রোগী আসতো, সেখানে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন করে রোগী আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুর জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে উচ্চমাত্রার কোনো অ্যান্টিবায়েটিক খাওয়ানো যাবে না। আমাদের দেশে শিশুর সামান্য একটু জ্বর হলেই মা-বাবারা ফার্মেসিতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে শিশুকে খাইয়ে দেয়। শিশুদের প্রাথমিকভাবে জ্বর উঠলে সিম্পল প্যারেসিটেমল সিরাপ খাওয়াতে হবে। এক বছর থেকে তিন বছরের বাচ্চাদের এক চামচ করে দিনে চার বার আর আর কাশির জন্য সার্বোটামল সিরাপ এ দুটোই যথেষ্ট। এরপরও না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ ও অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম