২ কিলোমিটার রাস্তার ভোগান্তি কমেনি দুই যুগেও
২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৮
যশোর: দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শহর যশোর। জেলা সদরের পাশাপাশি পৌরসভাও। সেই পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কিলোমিটার রাস্তাটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাপক ভোগান্তির কারণ। প্রায় দুই যুগ আগে রাস্তাটি তৈরি হলেও এর অবস্থা এখন বেহাল। খানাখন্দ ভরা রাস্তাটি জায়গায় জায়গায় ভেঙেও গেছে। দুই যুগেও সেই রাস্তার ভোগান্তি এতটুকু কমেনি।
দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারহীন পড়ে থাকা রাস্তাটি যশোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দিপাড়ার মেঠো পুকুর এলাকার। এ রাস্তার একটু পরপরই খানাখন্দ। রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনে নেই ঢাকনা। তাতে ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তার কিছু কিছু অংশ ভেঙে চলে গেছে পুকুরের মধ্যে। বলতে গেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগিতাই হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি পরিণত মরণফাঁদে। এটি রাস্তা নাকি খাল— দূর থেকে দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না।
সরেজমিনে বারান্দিপাড়া মেঠো পুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই শীতকালেও রাস্তাটি ছোটবড় গর্ত আর খালা-খন্দে ভরপুর। রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেল নিয়ে এই রাস্তায় চলাচলের উপায় নেই। মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও এখন আর এই সড়কে চলাচল করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে মেঠোপুকুরপাড়ের দেড় হাজার বেশি মানুষকে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই পথ ধরে। সবাই তো বটেই, বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী, বয়স্করা ও রোগীদের।
বারান্দিপাড়া মেঠো পুকুরপাড়া বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘দুই দিন আগে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে যায়। রাতে হাসপাতালে নিয়ার (নেওয়ার) জন্য রিকশাওলাকে বললে ৫ মিনিটের পথের জন্য ২০০ টাকা ভাড়া চান। ২০০ টাকা না দিলে রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন রিকশা চালক। ভাঙাচোরা রাস্তায় বেশি টাকা না দিতে পারলে অনেক সময় রোগীদের কাঁধে বা কোলে করে মেইন রোডে নিয়ে যেতে হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয় প্রসূতি মায়েদের নিয়ে।
বয়োবৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, খালখন্দে ভরে গেছে রাস্তা। এখন চলতে গেলেই হোঁচট খেতে হয়। উল্টে যায় রিকশা, ভ্যান, অটো, সাইকেল, মোটরসাইকেল। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেন ও রাস্তা পানিতে ভরে যায়। এই নোংরা পানি পেরিয়ে পথচারীদের যাতায়াত করতে হয়। ৫ মিনিটের রাস্তা ১৫ মিনিটেও পার হওয়া যায় না। দুই ধারের বাড়িতেও নোংরা পানি ঢুকে যায়।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, ২০০১ সালে রাস্তাটি তৈরি করা হয়। তারপর আর সংস্কার করা হয়নি। রাস্তার পাশ দিয়ে তৈরি ড্রেনের ওপরে ঢাকনা ভেঙে গেছে। অধিকাংশ জায়গায় ড্রেনের ওপরে ঢাকনা নেই। অনেক সময় বাচ্চারা ড্রেনের মধ্যে পড়ে যায়। রাতে চলতে গেলে হোঁচট খেয়ে ড্রেনের মধ্যে পড়ে যেতে হয়।
আব্দুর রশিদ আরও বলেন, কয়দিন আগে আমার ছেলে-নাতি সাইকেলে চড়ে স্কুলে যাচ্ছিল। সাইকেল রাস্তার ভাঙায় লেগে পুকুরে মধ্যে পড়ে যায়। তবে এ রাস্তা ভেঙে পুকুরের মধ্যে চলে গেছে বেশির ভাগ জায়গায়। ফলে রাস্তা চিকন হয়ে গেছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে বেশি।
রহিমা বেগম, ইনা মন্ডল, সৌখিনাসহ বেশ কয়েকজন নারী বলেন, ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। ভোট আসলেই উন্নয়নের প্রতিশ্রুত দেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু বিজয়ী হওয়ার পরে আর কাজ করে না কেউ। ২৩ বছর আগে রাস্তা হয়েছে। তারপর সংস্কার বা উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাটি সংস্কার করা সময়ের দাবি।
এদিকে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে রোববার দুপুরের দিকে যশোর বারান্দিপাড়া মেঠো পুকুরপাড়া কমিউনিটি ফোরাম মানববন্ধন আয়োজন করেছিল। এতে প্রায় তিন শ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সাইদুর রহমান বলেন, মেঠো পুকুরপাড়া রাস্তার নিয়ে যশোর পৌরসভায় আলোচনা করা হয়েছে। দ্রুত মাপজোঁক করে ঢাকায় পাঠানো হবে।
যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, ৪০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। খবু দ্রুত মেঠো পুকুরসহ ছোট-বড় অনেক রাস্তা সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও আগামী দুই বছরের মধ্যে যশোর পৌরসভার ছোট বড় আর কোনো সড়ক খারাপ থাকবে না বলে আশা করি।
সারাবাংলা/টিআর