সাথীফসলে বাড়ছে লাভ, চুয়াডাঙ্গায় আখচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে চাষিরা
২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪০
চুয়াডাঙ্গা: দর্শনায় অবস্থিত বৃহৎ চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি কমপ্লেক্স। এ চিনিকল কমপ্লেক্সে আখমাড়াই করে চিনি, চিটাগুড়, উন্নতমানের মদ, ভিনেগার, এবং জৈব সার উৎপাদন করা হয়। কিন্তু দিন দিন উন্নত জাতের আখ চাষ কমে যাওয়ায় এ চিনিকলে উৎপাদন ব্যহত হয়ে চিনি আহরণ কমে যাচ্ছিল। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে আখের সঙ্গে সাথীফসল চাষে লাভের মুখ দেখায় কৃষকরা ফের আখচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
জানা গেছে, আখ চাষ ১২ থেকে ১৪ মাসের চাষ হওয়ায় শুধুমাত্র এ চাষের জন্য চাষিরা জমি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। ফলে উন্নত মানের আখ না পেয়ে চিন্তিত ছিল চিনিকল কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। তবে এখন জেলার আখচাষিদের আধুনিক প্রযুক্তিতে আখচাষের সঙ্গে সাথীফসল চাষ করে লাভবান করার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করছে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট চুয়াডাঙ্গা উপকেন্দ্রের তথ্যমতে, আখের সঙ্গে সাথীফসল হিসাবে ডাল, মসলা ও সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদন প্রকল্পের অর্থায়নে এ মৌসুমে প্রায় দেড় শতাধিক আখচাষিদের আখ ও সাথীফসলের বীজ, সার ও কীটনাশক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একজন চাষির জমি ও শ্রম ছাড়া চাষের সমস্ত উপকরণই সরবরাহ করা হচ্ছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। আখের সঙ্গে ভুট্টা, সরিষা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গাজর, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার ডাল চাষ করছে চাষিরা। এতে লাভের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। লাভের আশায় পরিকল্পিতভাবে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন চাষিরা।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের আখচাষি রাশেদুল বলেন, ‘আখের সঙ্গে ফুলকপির চাষ করেছি। এ দুটি চাষে আমার ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আখ আর ফুলকপি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে আমার লাভ হবে ২ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকা।’
একই গ্রামের সাইদুর বলেন, “দু’বিঘা জমিতে আখের সঙ্গে ফুলকপি চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছি। এখনো যে কপি জমিতে আছে সেগুলো ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। একেকটি কপির ওজন দেড় থেকে ২ কেজি। আখে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। দু’বিঘা জমির আখ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে লাভ হবে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা।”
জেলার সদর উপজেলার আখচাষি আখতার বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। এর মধ্যে সাথী ফসল পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। এক বিঘা জমিতে ৭০ মন পেঁয়াজ হয়েছিল, যা বিক্রি করেছি ৭০ হাজার টাকায়।’
একই গ্রামের আমির হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আখচাষের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ছোলা আবাদ করেছিলাম। এ জমিতে সাড়ে ৫ মন ছোলা হয়েছে। ছোলা কেটে জমিতে মুগ চাষ করেছিলাম। সেই মুগ ৭৫ কেজি হয়েছে। এ চাষের ফলে জমিতে আখও ভাল হয়েছে।’
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আবু তাহের সোহেল বলেন, ‘এটি ৩ বছরের প্রকল্প ছিল। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে খুশি হয়ে প্রকল্পের কাজ একবছর বাড়িয়ে দিয়েছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো আখ চাষের সঙ্গে সাথীফসলের চাষ করে চাষিদের উৎসাহিত করা।’
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর আলী বলেন, ‘আখ একটি দীর্ঘমেয়াদী ফসল। এই ফসল উঠতে ১২ থেকে ১৪ মাস সময় লাগে। কিন্তু আমাদের কৃষকের সব সময় টাকা দরকার। আবার একটি বিষয় হলো আমাদের জমি কম কিন্তু একই জমি থেকে আমরা বিভিন্ন ফসল পেতে চাই। সেজন্য আমরা আখের সঙ্গে বিভিন্ন সাথীফসল যেমন সবজি, মসলা এবং ডাল জাতীয় ফসল চাষ করতে থাকি। এতে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে এবং আখের ফলন বাড়ছে। এ অঞ্চলে যে ফসল ভালো হয়, সে ফসল আখের সঙ্গে সাথীফসল হিসেবে ফলিয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। জমির সুষ্ঠু ব্যবহার, খরচ কমানো, ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এ প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের আখের সঙ্গে সাথীফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এমও