অবসরে যাওয়া জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের সরকারি সুবিধা দিতে রুল
২২ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৯
ঢাকা: অবসরে যাওয়া জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা (বেতন-ভাতা, পেনশনসহ যাবতীয় ভাতা) দিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জাতীয়করণকৃত সরকারি কলেজের আট শিক্ষকের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটেল পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব। আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব।
তিনি বলেন, সরকার ২০১৬ সালের ১৭ মে থেকে জাতীয়করণের জন্য পর্যায়ক্রমে ৩০৩টি কলেজ নির্বাচন করে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই গেজেট জারি করে। ওই গেজেট প্রকাশের পর থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কলেজের প্রায় ৩ হাজার প্রবীণ শিক্ষক অবসরে গেছেন। ওই সময়ে কলেজ জাতীয়করণ হলেও তারা বেতন-ভাতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক অবসরে গেছেন। কারণ জাতীয়করণের পরও তাদের চাকরি রাজস্বখাতভুক্ত করা হয়নি। তারা জাতীয়করণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েই অবসরে গেছেন।
এসব কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে গত ৯ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের বিষয়ে সাড়া না পেয়ে গত ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের কর্নফুলী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফি উল্লাহসহ, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ এবং রাজস্থলী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত আট জন শিক্ষক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, অর্থ সচিব, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ ১৯ জনকে বিবাদী করা হয়।
আজ ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত এসব শিক্ষকদের কেন সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসাবে আত্তীয়করণ করে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সরকারিকরণের তারিখ থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে শত শিক্ষা সচিব, অর্থ সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রিট আবেদনের এ বিষয়ে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩০৩ কলেজ জাতীয়করণ অবসরে গেলেও সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন শিক্ষকরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩০২টি কলেজের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১৪৫টি কলেজের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি কলেজে ফাইল যাচাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই ৫৫টি কলেজের মধ্যে ৪০টি কলেজের ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আর ২০টি কলেজের ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ২০টি কলেজের ফাইল এখন সচিব কমিটিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি কলেজের ফাইলেই রয়েছে দুই-এক জন শিক্ষকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি। ফলে আপত্তি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণের বিষয়ে অনুমোদনের জন্য সচিব কমিটিতে পাঠানো যাচ্ছে না। সচিব কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, অনুমোদনের জন্য একটি কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তার তথ্য একসঙ্গে পাঠাতে হবে। পৃথক পাঠানো যাবে না। এ কারণেই বিলম্ব হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এক জন বা দুই জন শিক্ষকের কারণে কলেজের সব শিক্ষকের সরকারিকরণ আটকে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ধীরগতি ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় এসব কাজ শেষ হতে হয়তো আরেও কয়েক হাজার শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত অবসর গ্রহণ করেন ৩৩৮ জন। আর জুলাই ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অবসরে যান ১৬৯ জন। ২০২০ সালে অবসরে যান ৪৩৫ জন।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে অবসরে যাবেন ৪৫০ জন। ২০২২ সালে ৪৫৮ জন, ২০২৩ সালে ৪৪৮ জন, ২০২৪ সালে ৪৫৬ জন এবং ২০২৫ সালে অবসরে যাবেন ৫২৫ জন। চাকরিবিধি অনুযায়ী বয়স ৫৯ বছর হওয়ায় এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে