খাল দখল করে ৩ তলা ভবন, ভুয়া দলিলে ব্যাংক ঋণ
২২ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৩
ঢাকা: খাল দখল করে নির্মাণ করেছেন তিন তলা ভবন। পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন ডেইরি ফার্ম। নিজের নামে এসব জমি ও স্থাপনার ভুয়া দলিল বানিয়ে ব্যাংক থেকে নিয়েছেন বড় অঙ্কের ঋণ। এ সব জমি ভোগ দখল করছিলেন জাকের ডেইরি ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন। অবশেষে পাউবো ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ সব জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে।
পাউবোর নথিতে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর খানার রামচন্দ্রপুর মৌজার সিএস দাগ নাম্বার ৬৭০-এ রামচন্দ্রপুর খালের ওপর ২০১৩ সালে একটি সংযোগ সেতু নির্মাণের অনুমতি পান আনোয়ার হোসেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ২৭০ ফুট প্রশস্ত খালের ওপর সেতুটি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংযোগ সেতু নির্মাণের অনুমতি পেলেও আনোয়ার হোসেন পাউবো ও সিটি করপোরেশনের পাশের প্রায় এক একর জায়গা দখল করে সেখানে গড়ে তুলেছেন জাকের ডেইরি ফার্ম। জায়গার দাগ নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে অন্য দাগে নিজের নামে ১৯ শতাংশ জমি কিনে সেই দলিল দেখিয়ে দখল করা জমির খাজনা পরিশোধ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা জমির মালিকানা দলিল করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট লিজিং কোম্পানি অব বাংলাদেশ (আইডিএলসি) থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি। ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরের হিসাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মৌজায় এ জমির বর্তমান অর্থমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেনের দাবি, নিজের জমির পাশে কিছু জায়গা খাস জমি তার দখলে থাকলেও সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের আবেদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
খাল দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাশের বেড়িবাঁধের কারণে এই খালের প্রবাহ আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখানে ভবন নির্মাণ করেছি।’
জালিয়াতি ও জাল দলিল সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ জায়গা আমার কেনা। খামারটির ওপরে প্রায় দুই কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। কাগজপত্র বৈধ না হলে ব্যাংক কীভাবে এত টাকা ঋণ দিলো?’
তবে দাবির পক্ষে আনোয়ার হোসেন যেসব চুক্তিপত্র ও দলিল দেখিয়েছেন, তাতে পাউবো বা সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো সই বা সিল ছিল না।
পাউবো জানিয়েছে, রামচন্দ্রপুর খাল ও আশপাশের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে পারলে খাল ও পাশের জমি উদ্ধার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান জানান, সমন্বিত বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ৬৭০ নম্বর দাগের ২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার থেকে ২২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী স্থানে কেবল একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে তা ব্যবহারের জন্য আনোয়ার হোসেনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর বাইরে আশপাশে যেসব স্থাপনা তিনি নির্মাণ করেছেন, তার পুরোটাই অবৈধ।
তবিবুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি ডিএনসিসি সূত্রে আমরা এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। দখল হওয়া অধিকাংশ জমি আমরা এরই মধ্যে উদ্ধার করেছি এবং খুব শিগগিরই বাকি অংশগুলো উদ্ধার করা হবে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকা রামচন্দ্রপুর খাল ও পাশের জমিগুলো উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। দখল উচ্ছেদ করে জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার পর আনোয়ার হোসেন ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করার পর প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও জমির দখল না ছাড়ায় উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করে ডিএনসিসি। এরই মধ্যে খাল ও পাশের দখলি জমির বড় অংশই উচ্ছেদ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি উচ্ছেদ করা স্থানে খেলার মাঠ ও শিশুদের জন্য পার্ক নির্মাণ করা হবে বলে সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির অঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, ‘জাকের ডেইরি ফার্ম যেখানে গড়ে উঠেছে, তার পুরোটাই রামচন্দ্রপুর খালের অংশ। খাল ভরাট করে এরা তিন তলা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। দখল করা জমির দলিল তারা দেখাতে পারেনি বলে আমাদের নিয়মিত উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় আমরা এরই মধ্যে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করেছি। এ ছাড়া আশপাশের সরকারি স্থানে গড়ে ওঠা অন্যান্য স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে।’
সারাবাংলা/একে