শীতে জবুথবু উত্তরাঞ্চল, বিপাকে খামারি ও কৃষকরা
২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:২৮
রংপুর: ঘন কুয়াশার দাপট আর হাড় কাঁপানো শীতের প্রভাব পড়েছে উত্তরাঞ্চলে। একদিকে যেমন কুয়াশার দাপট, অন্যদিকে তীব্র শীতে জনজীবনে ঘটেছে ছন্দপতন। এ পরিস্থিতিতেই কাজ করতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষদের। একইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে গবাদিপশু ও ফসলহানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকরা। এ পরিস্থিতি মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ভোর থেকেই তীব্র কুয়াশায় ঢেকে গেছে উত্তরাঞ্চলের ঢাকার আকাশ। সকাল ১০টা পর্যন্তও দেখা মেলেনি সূর্যের। যানবাহনগুলোকেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। অন্যদিনের তুলনায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে জবুথবু নগরবাসী।
রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষাণাগারের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮ দশমিক ৫, নীলফামারীর ডিমলায় ৯ দশমিক ৫, সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ২, লালমনিরহাটে ৯ দশমিক ২, গাইবান্ধায় ৯ দশমিক ৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
তীব্র শীতের কারণে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। নদী বিস্তৃত জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। জেলার বিভিন্ন স্থানে দিন দিন তীব্র হচ্ছে শীতের প্রকোপ। শীত বাড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে চরাঞ্চল এবং নদীপাড়ের মানুষ। একইসঙ্গে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। গত এক সপ্তাহ থেকে জেলার তাপমাত্রা ৯ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। কোনো দিন ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিক আবার কোনো দিন মেঘে ঢাকা থাকে আকাশ।
একই অবস্থা লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরেও। শীতের তীব্রতা বাড়ায় চরম কষ্টে পড়েছেন এসব জেলার চরাঞ্চল ও নদী পাড়ে বসবাসকারী মানুষ। পাশাপাশি এসব জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার হাজারও দিনমজুর, পাথরভাঙা শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, রিকশা-ভ্যানের চালক বিপাকে পড়েছেন।
রংপুর নগরির শহরতলির রিকশা চালক আমজাদ মিয়া জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। অন্যদিকে যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের আয় রোজগারে টান পড়েছে।
পৌষের বিদায় বেলায় জেঁকে বসা শীতে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডা জনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই জ্বর, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেক রোগী। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যায় বেশি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক আব্দুল আহাদ জানান, হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধ প্রতিদিনই জ্বর, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছি।
এদিকে মানুষের পাশাপাশি তীব্র শীতের প্রভাবে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকরা। এদিকে এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় গবাদিপশুর বদহজম ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তারা।
ঠান্ডা ও রোগবালাই থেকে গবাদি পশুকে রক্ষা করতে গরুর ঘর পরিষ্কার ও পরিছন্ন রাখার পরামর্শ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের।
রংপুরের মাহিগঞ্জের খামারি ইকরামুল কবির বলেন, ‘শীতে ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যার কারণে গরুর জ্বর হওয়ায় খাওয়ার রুচি কমে গেছে। এতে দুধের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। এই ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়েছে গবাদি খাদ্যের দাম বাড়ায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে হু হু বাড়ছে খাদ্যের দাম। খামারে গরু নিয়ে চরম আশঙ্কায় রয়েছি। সবমিলিয়ে খামারিরা খুব বিপদে আছি।’
এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। শীত ও কুয়াশার কারণে রংপুর বিভাগের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ দুইদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে বুধবার পর্যন্ত বিভাগের ৪ হাজার ৩৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ হাজার ৯৪৬টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ৫৩৮টি মাদরাসা এবং ১ হাজার ৫৪৮টি এবতেদায়ী মাদরাসার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শীত ও ঠান্ডার তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে আবারও যথারীতি পাঠদান চালু করা হবে।
সারাবাংলা/আরএইচএস/এনএস