‘ঢাকার চারপাশের ৫০০ ইটভাটা ভেঙে ফেলা হবে’
২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪৪
ঢাকা: পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বায়ুদূষণ কমাতে ১০০ দিনের কর্মসূচী হিসেবে রাজধানী ঢাকার চারপাশের ৫০০ অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে। ঢাকার চারপাশে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা এক হাজার। আর সারাদেশে এ সংখ্যা দ্বিগুন। এগুলো ধীরে ধীরে উচ্ছেদ করা হবে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দেশে বায়ুদূষণ কমানোর জন্য কী পরিকল্পনা নিচ্ছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমে বায়ু দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করছি। উৎস কি সেটা না জানলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। বায়ুরমান যখন খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তখন আমরা একটা এলার্ট ইস্যু করতে চাই। জনসাধারণকে বলতে চাই, আজকের বায়ুর মান স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড ঝুঁকি। সুতরাং তাদের যদি জরুরি কাজ না থাকে তাহলে যেন ঘরের বাইরে না যায়। এছাড়া ডব্লিউএইচও বলছে মাক্স পড়তে হবে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা, এটা আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘বাযুদূষণের উৎসগুলোর বিপরীতে কি ব্যবস্থা নিতে পারি। আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন ঢাকার আশেপাশে যে অবৈধ ইটের ভাটা আছে সেগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছি। সেটা দিয়ে পুরো সমস্যা সমাধান হবে না। সকলের সহযোগিতা নিয়ে কাজটা করতে চাই, এজন্য সময়ের প্রয়োজন। আগামীকাল ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করব। সেখানে এসব বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে।’
কতগুলো ইটভাটা অবৈধ, আর কতগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘আদালতের হিসেবে দুই হাজারের মতো অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। আমরা প্রথমে ঢাকার আশেপাশে স্থায়ী চিমনিগুলো চিহ্নত করছি। ১০০ দিনের কর্মসূচিতে দিনে গড়ে তিন থেকে চারটি ইটভাটা গুড়িয়ে দেব। অথ্যাৎ ১০০ কর্ম দিবসে লক্ষ্য হচ্ছে ৫০০ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেব। ঢাকার চারপাশে এক হাজার অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। আসলে এধরনের ইটভাটার জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ। আরেকটা আছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড ঘিরে দুর্নীতি হয়। অবৈধকে বৈধ করতে নানা ধরনের লেনদেন হয়। আমরা চাচ্ছি এটাকে নির্মূল করতে। আমরা চাইনা এ ধরনের ইটভাটা থাকুক। ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লক ইট নিয়েও উৎসাহিত করতে হবে। আর একম দিনের কর্মসূচী ১০০ দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আমরা শুরু করছি… এই বার্তাটা দিতে চাচ্ছি যে কোনো ধরনের অবৈধ ইটভাটা রাখতে চাচ্ছি না।’
বাড়ি নির্মাণ ক্ষেত্রে বা বালি, সিমেন্ট পরিবহন, গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেবেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এজন্য সিটি করপোরেশন আছে, তাদের সহায়তা নিতে হবে। একইসঙ্গে জরিমানাগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। গাড়ির ধোঁয়া নিয়ে বিআরটিএ আছে। শব্দদূষণ বিষয়েও বিআরটিএ দেখে। আমরা শুধু পরিবেশের মান মাত্র নির্ধারণ করি। তবে এটা কার্যকর করার দায়িত্ব শুধু আমাদের না সকলের দায়িত্ব।’
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আছে তার একটা অন্যতম দিক হচ্ছে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন বলেছিলেন ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা জলবায়ু অভিযোজন চুক্তি করতে আগ্রহী। সেই চুক্তিতে কোন কোন বিষয়গুলো থাকবে ও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে আজ তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করব। তারপর আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দুইজনে মিলে এই চুক্তি সই করবেন বলে আমার ধারণা।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ফরাসি দূতাবাস ঢাকার ফার্স্ট কাউন্সেলর এবং ডেপুটি হেড অব মিশন গুইলাম অড্রেন ডি কেরড্রেল, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জুলিয়েন দেউর, বাংলাদেশে এএফডি কান্ট্রি ডিরেক্টরের ডেপুটি সিসিলিয়া কর্টেস’সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস