রূপসার রাস্তায় মারণযন্ত্র ‘ট্রলি’র দৌরাত্ম্য, বাড়ছে প্রাণহানি
২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৭
খুলনা: রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৪৫)। ছিলেন গ্রিল ব্যবসায়ী। গত রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে তিনি নৈহাটি থেকে রূপসা ঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে ৩ নম্বর নৈহাটি ইউনিয়নের রূপসা-বাগেরহাট পুরাতন সড়কের নৈহাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিকে থেকে আসা যন্ত্রদানব ‘ট্রলি’ তাকে সজোরে ধাক্কা। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। সাইফুল ইসলামের মতো এরকম অনেকের জীবন কেড়ে নিয়েছে এই অবৈধ ট্রলি। রূপসা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দাঁপিয়ে বেড়ানো এসব ট্রলিতে সাধারণত ভাটার ইট, বালু বা মাটি পরিবহন করা হয়।
সরকারিভাবে নিষিদ্ধ যন্ত্রযান তিন চাকার অবৈধ ট্রলি। শ্যালো মেশিন দিয়ে এই ট্রলি তৈরি করা হয়। এসব ট্রলির দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। ট্রলি চালকদের বেশিরভাগই অদক্ষ। যাদের নেই কোনো লাইসেন্স। যে কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই যানের ধাক্কায় ঘটছে প্রাণহানি ও পঙ্গুত্ব। এছাড়া এগুলোর বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দ দূষণও। ট্রলির বেপরোয়া চলাচলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে স্কুলগামী কোমলমতি ছোট ছোট শিশু ও এলাকার নারীরা। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চলছে এইসব অবৈধ যানবাহন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। এসব অবৈধ ট্রলি চলাচল বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গতবছরের ২ অক্টোবর মোটরসাইকেল যোগে চাঁদপুর কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম (৪৫) খুলনা শহরে যাচ্ছিলেন। তিনি ঘাটভোগ ইউনিয়নের আলাইপুর ব্রিজ পার হয়ে আলাইপুর এলাকার তেমাথা নামক মোড়ে পৌঁছালে সড়কের পশ্চিম দিক থেকে আসা ট্রলির সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তিনি নিহত হন। গত বছরের ২৫ এপ্রিল ওই ব্রিজের কাছেই অবৈধ ট্রলির ধাক্কায় যুথী পাল (১৭) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন।
এছাড়া, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে রূপসা উপজেলার শিয়ালি এলাকায় ট্রলির ধাক্কায় নছিমনের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। একই বছর ২২ মার্চ রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামে বেপরোয়া ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে ওই গ্রামের আকবর আলী সরদারের মেয়ে ও আনন্দ নগর ইফতেদায়ী মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী আখি মনি (৭) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়।
উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের বাসিন্দা নাহিদ মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই ট্রলির কারণে অনেক মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। ট্রলির মালিকরা প্রভাবশালী হয়ে থাকে। যে কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। এই অবৈধ ট্রলি দ্রুত বন্ধ করা হোক।’
আইচগাতী ইউনিয়নের বাসিন্দা লুতফার শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রলি একটি বিপদজনক গাড়ি। যারা চালাচ্ছে তারাও অদক্ষ। এলাকার অলি-গলিতে বেপরোয়া ট্রলি চালানোয় জননিরাপত্তা দিন দিন হুমকির মধ্যে পড়ছে। এই অবৈধ ট্রলি বন্ধ করা হোক।’
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর জাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে চলচলকারী ট্রলির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম