চুয়াডাঙ্গা: টানা ৪৭ দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ভোরে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হালকা রোদের দেখা মেলে। একইসঙ্গে মৃদু শৈতপ্রবাহ অব্যাহত ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। টানা শীতে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে এক প্রকার স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু শ্রমজীবী মানুষ, কনকনে শীত উপেক্ষা করেই কাজে নেমে পড়েছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
এ আগে, গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ২০ মিনিট হতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে তা সন্ধ্যা ৬টার পর পর্যন্ত চলে। এ সময় পর্যন্ত দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
এদিকে টানা ৪৭ দিন ধরে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করায় জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়লেও কাজে নেমে পড়েছেন দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষরা। শীত যেন তাদের কাছে পরাজিত। কেউ বেরিয়েছেন রিকশা নিয়ে। অনেক কাঁদা মাটি দিয়ে ইট বানাতে ব্যস্ত। অবার অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন কাজের জন্য।
বৃহস্পতিবার জেলার শহরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসান চত্বরের পূর্বপাশে সকালে কাজের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তারা হলেন— সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কাঁথুলী গ্রামের মৃত মকছেদের ছেলে তোয়াক্কেল (৫২), একই উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের হানুড়বারাদী গ্রামের মকছেদ আলী মণ্ডলের ছেলে কাদের (৫৫), ওই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মোশারফ (৬১), গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের আকবার বিশ্বাসের ছেলে মহিউদ্দিন (৬০) ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাস ইউনিয়নের বলেশ্বরপুর গ্রামের মজহার বিশ্বাসের ছেলে ইউসুফ আলী (৭০)।
কথা হলে তারা জানান, শীতের কারণে কেউ তাদের কাজে নিচ্ছে না। তাই এক রকম না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দিন কাটছে। তাদের দেখার কেউ নেই।
ঠিক একই কথা বললেন রিকশা চালক রাজ্জাক, ইলিয়াস ও খালেক। তারা জানান, প্রতিদিন সকালে কর্মজীবী মানুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পরিবহন করে তারা ভাল রোজগার করতেন। কিন্তু শীতের কারণে মানুষ বাড়ি থেকেই বের হচ্ছে না। তাই রোজগার নেই বললেই চলে।
চুয়াডাঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি এলাকায় ইটভাটায় কাজ করছিল কয়েকজন শ্রমিক। তাদের মধ্যে রবজেল, ঈশা ও করিম জানান, যতই শীত-কুয়াশা থাকুক না কেন, পরিবারের জন্য তাদের কাজে আসতে হয়েছে। এতদিন শীতের মধ্যে কেউই তাদের খোঁজ নেয়নি। কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তো আর সংসার চলবে না। এ জন্যই কাজে আসা।