Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাপাকে মুদি দোকান আখ্যা দিয়ে ৬৭১ নেতাকর্মী পদত্যাগ

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৯

ঢাকা: জাতীয় পার্টিতে চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের ১০ থানার ৬৭১ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগী নেতারা বলছেন, জিএম কাদের ও চুন্নু জাতীয় পার্টিকে নিজেদের দল মনে করেন। দলটিকে তারা মুদি দোকান মনে করে। তারা সকালে অফিসে আসেন, সন্ধ্যায় ফিরে যান। এখানেই খাওয়া-দাওয়া করেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু। সংবাদ সম্মেলনে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহীন আর সুলতানা রিমা, বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, ‘আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন পূর্বাপর জাতীয় পার্টির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন। জাতীয় পার্টিতে বর্তমানে যিনি চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত আছেন- সেই জিএম কাদের একবছর আগে থেকেই বলে আসছেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। সেইভাবে তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি এবং মিডিয়ায় কথা বলে এসেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলে নিজেকে বিরোধী নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টাও করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের আগে বুঝতে পারলাম, তিনি গোপনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নিজের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ৩০০ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করার পর মাত্র ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার বিনিময়ে গোটা পার্টিকেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। আর সমঝোতা করে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ মাত্র ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে এমপি হয়ে এসেছেন।’

বিজ্ঞাপন

পদত্যাগী এই নেতা বলেন, ‘এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতা ও কর্মী সমর্থকরা চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। পার্টির তৃণমূল পর্যায় থেকে পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবার জন্য চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। পার্টির এই দুরবস্থার মধ্যেও চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতাদের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জিএম কাদের পল্লীবন্ধু এরশাদের নাম-নিশানা মুছে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান পার্টির নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদের ভাষা বুঝতে না পেরে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগ্রামী আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকজন নেতাকে মৌখিকভাবে অব্যাহতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন।’

জাহাঙ্গীর আলম পাঠান আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীদের এই অব্যাহতি শিষ্টাচার বহির্ভূত। এমতাবস্থায় আমরা এরশাদ প্রেমিক নেতাকর্মীরা জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন তার বিপর্যস্ত সংগঠনে অবস্থান করে প্রাণপ্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই আমরা জিএম কাদেরের সংগঠন থেকে আজ গণপদত্যাগ ঘোষণা করছি। সেইসঙ্গে আপনাদের কাছে এই অঙ্গীকারও করে রাখছি-অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা পল্লীবন্ধু-এরশাদের চেতনা প্রেরণা ও নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকব।’

সংবাদ সম্মেলনে জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুও কথা বলেন। এদিন ঢাকা মহানগর উত্তরের ১০ থানার ৬৭১ জন নেতাকর্মী গণপদত্যাগ করেন। থানাগুলো হলো- মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরে-ই-বাংলা, হাতিরঝিল, পল্লবী, মিরপুর, বাড্ডা, রূপনগর, দারুস সালাম, ক্যান্টনমেন্ট থানা। এই গণপদত্যাগ অব্যাহত থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

জাতীয় পার্টি নেতাকর্মী পদত্যাগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর