চসিকের ‘পাহাড়খেকো’ কাউন্সিলর জসিম বরখাস্ত
২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অপরাধে বিতর্কিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শনে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার সহকর্মীদের ওপর হামলার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পদ হারালেন এ জনপ্রতিনিধি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) কাউন্সিলরকে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বুধবার এ আদেশ হয়েছে বলে উল্লেখ আছে।
জহুরুল আলম জসিম চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আব্দুর রাফিউল আলমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে। এজন্য স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী তাকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ধারা ১২(১) এ উল্লেখ রয়েছে, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে, সরকার, লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমত, কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আদেশের কপি আমাদের চিফ স্যারের (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) কাছে এসেছে। মন্ত্রণালয় থেকে আদেশে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জহুরুল আলম জসীমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
গত বছরের ২৬ জানুয়ারি নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে গেলে জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের হামলার শিকার হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। তারা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোঁড়ে ও হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় রিজওয়ানা হাসান আকবর শাহ থানায় জসিমসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ১২ জুন ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে জহুরুল আলম জসিমকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন- জসিমের সহযোগী বিল্লাল হোসেন, আবু নোমান, সাইফুদ্দিন ভূঁইয়া, আনিছ চৌধুরী ও মো. শাকিল। এদের মধ্যে নোমান ছাড়া বাকিরা জামিনে আছেন।
পাহাড় কাটার অভিযোগে জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা আছে। গত বছরের ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে একজন নিহত ও চারজন আহত হন। ১১ এপ্রিল সেই পাহাড় কাটার অভিযোগে জহুরুল আলম জসিম ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন প্রকৌশলীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদফতর।
এরপর ২৯ এপ্রিল নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন গরুর খামার গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
এর আগে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আকবর শাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদফতর।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম