বরখাস্ত শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে সুপারিশ, নারাজ সহকর্মীরা
২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৪
ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীন পরিচালিত পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হওয়া এক শিক্ষককে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। ওই শিক্ষকের নাম শরিফুল আলম। পেশাগত অসদাচরণ, দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
গতবছর দুর্নীতি, সনদ জাল করা, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রদের উসকে দেওয়া, মানসিক নির্যাতন, নৈতিক অবক্ষয়, নারী সহকর্মীদের অনৈতিক কাজের প্রস্তাবসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুসারে শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। এবার অভিযুক্ত সেই শিক্ষককেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব দেয়ায় তার সাথে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সহকর্মীরা। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার জানান, তখন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে শরিফুল আলম কর্মরত ছিলেন। দুর্নীতি সহ নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর গভর্নিং বোর্ডের সভায় সর্বসম্মতভাবে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য ৩০ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির কাছে আবেদন করা হয়। সম্প্রতি সেই শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাউশি।
তিনি বলেন, ‘এর মাঝে তিনি মাউশি থেকে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা এলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিতে গেলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ প্রতিষ্ঠানটির কিছু শিক্ষক এর বিরোধিতা করেন।’ এরপর ওই শিক্ষক স্কুলের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় নিয়ে গেছেন এবং বিভিন্ন সময় আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষকেরা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। তিনি বিষয়টি পুনঃ তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। উপাচার্যকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে শরিফুল আলমের বলেন, ‘আমায় হয়রানি করা হচ্ছে যেহেতু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আমাকে প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে, তাই এখন আমার সঙ্গে কে দায়িত্ব পালন করবেন, কে করবেন না— এটি তাদের (শিক্ষকদের) একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। আমার মাত্র ৯ দিন চাকরিজীবন রয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে চাকরিজীবন শেষ করতে চাই।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহজাহান বলেন, ‘একবছর আগে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম। রিপোর্টে কি ছিল তা এখন সঠিকভাবে বলতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যেসব অভিযোগ উঠেছে, মনে হয় সেসব আমলে নেয়নি অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা অভিযোগগুলো নিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে সেই শিক্ষকের সঙ্গে কাজ করতে নারী শিক্ষকেরা অনেক বেশি অনিরাপদ বোধ করছেন। যদি সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য হয়ে থাকে, তবে প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতার জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়া ভালো হবে না।’
সারাবাংলা/একে