তীব্র শীতে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা, দুশ্চিন্তায় বোরো চাষিরা
২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৫
ঠাকুরগাঁও: টানা ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের জনজীবন। তাপমাত্রা ৮ থেকে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। কারণ ঘন কুয়াশা ও শীতে নষ্ট হতে বসেছে বোরো ধানের বীজতলা। এতে করে বোরো চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। তবে জেলা কৃষি অফিসের দাবি, শীতে বোরোর বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোথাও বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে বীজতলা রক্ষায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন কৃষকরা। এতে করে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ইতোমধ্যে কৃষকদের শুকনো, ভেজা, ভাসমান তিন ধরনের বীজতলার বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বীজতলা তৈরীতে স্থান, জমি তৈরি, শেড তৈরি, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, বীজ জাগ দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে কৃষকদের। এছাড়াও শুকনো বীজ একটানা কত ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং কোন জাতীয় স্থানে রাখতে হবে- সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য তাদের প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ভাল চারা উৎপাদনের জন্য বীজের অঙ্কুরোদগমের বিষয়ে দিক নির্দেশনা নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে।
জেলা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৬২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় মোট ৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। গত বছর ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া রামনাথ এলাকার কৃষক সুধির রায় বলেন, প্রত্যেক বছর তিনি কমপক্ষে ৩ বিঘা (১৫০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগান। এ বছরও তিনি বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। তীব্র শীতে বেশিরভাগ চারা গাছ মারা যাচ্ছে। শীতের প্রকোপে চারাগুলো বড় হচ্ছে না বলে। তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেলে চারা আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের কৃষক সামশুল হক জানান, প্রত্যেক বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা (২২৫ শতক) জমিতে বোরো ধান চাষ করে থাকেন। এ বছরও বোরো ধান রোপনের কাজ শুরু করবেন। আপাতত বোরো ধানের বীজতলা করেছেন, শীতের কারণে সমস্যায় পড়েছেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে বেশ কিছু এলাকায় সামান্য কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও, সেটি বড় সমস্যা নয়। জেলার কৃষকদের প্লাস্টিক দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মতো বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।
সারাবাংলা/ইআইবি/এনএস