Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সীমান্তে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত চায় বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:০২

ঢাকা: ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই দাবি জানানো হয় বলে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই কারা বিবৃতিতে জানানো হয়।

বিবৃতিতে রিজভী বলেন, ‘গত রোববার (২১ জানুয়ারি) ভোরে যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়তই প্রাণহানীর সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে।’

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব মতে, ৭ বছরে ২০১ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার পর বিএসএফের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য।’

‘নিহত ব্যক্তি বিজিবির সদস্য তা আমরা বুঝতেই পারেনি। তিনি লুঙ্গী ও টিশার্ট পরে ছিলেন এবং পাচারকারী দলের সঙ্গে তাকে ভারতের সীমানার ভিতরে দেখা গিয়েছিল’— বিএসএফের এমন বক্তব্য প্রত্যাখান করে রিজভী বলেন, ‘একজন বিজিবি সদস্য কীভাবে লুঙ্গী আর টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে মিশে থাকতে পারেন, সেটি বোধগম্য নয়। এই বয়ান শুধু বানোয়াটই নয়, ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ গরীমা থেকে উৎসাহিত হয়ে বিএসএফ তাদের হত্যাকান্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। একজন বিজিবি সদস্য কখনোই লুঙ্গী ও টি-শার্ট পরে পাচারকারী দলের সঙ্গে থাকতে পারেন না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিএসএফ এর মন্তব্যের সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ও দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএসএফ এর এহেন আচরণের ইতিহাস যুগপৎ হিংসাশ্রয়ী ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বরাবরই বিএসএফের অপরাধকর্ম এবং বয়ানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান থাকে। তাদের আচরণে মনে হয় তারা আদিম ও মধ্যযুগ পেরোতে পারেনি।’

রিজভী বলেন, ‘মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যা করার পর তাদের মনগড়া বয়ানকে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এই মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ জুড়েই ক্ষোভ ও বিক্ষোভে আলোড়িত। জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতির কারণেই সীমান্তে রক্তপাত থামছে না। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে ‘ব্লাড-স্পোর্ট’ বা রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার এটি একটি আধিপত্যবাদী বার্তা। এতদিন বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর এখন সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। এক দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে আজ তাবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘দখলদার আওয়ামী সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্যচক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিজিবিকেও এখন বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, বিএসএফের ‘ডেলিবারেট কিলিং’ এখন সর্বজনবিদিত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব হত্যাকাণ্ডে আশকারা দেওয়া দিল্লীর উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দিল্লীর সঙ্গে অধীনতামূলক চিরস্থায়ী রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ফল হচ্ছে বিএসএফ কতৃর্ক সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় নিশ্চুপ থাকা। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যার ঘটনা পরের দিন পর্যন্ত জানতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাবিলাসী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নাগরিকদের জীবনের চেয়ে দখলদার আওয়ামী মন্ত্রীদের ক্ষমতা খুব জরুরি। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ। স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্তরক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে।

রিজভী বলেন, ‘ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতি নির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি। সেজন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনী হত্যাকাণ্ডে তারা কোনো দায়বোধ করে না। ফেলানীসহ সকল হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মহল এমনকি ভারতের বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ-উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করলেও ভারতীয় কতৃর্পক্ষ এর কোনো বিচার বা প্রতিকার করেনি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর হৃদয়বিদারক লাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনও ক্ষোভের আগুন জ্বলছে।’

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

জাতিসংঘ তদন্ত বিএনপি বিজিবি হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর