২০২৩ সালে সড়কে প্রাণহানি ৬৫২৪, এক-তৃতীয়াংশ মোটরসাইকেলে
২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪০
ঢাকা: ২০২৩ সালে সারাদেশে ছয় হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৭ জন। মোট সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হলো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনার জন্য যানবাহনের তুলনায় অপ্রতুল সড়ক, ফুটপাত দখল, অচেতনতা এবং একই সড়কে স্বল্প ও দ্রুত গতির যানবাহন চলাচলের মতো কারণকেই দায়ী করা হচ্ছে। সার্বিক সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির ১.৫ শতাংশের বেশি হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১১২৮ জন শিশু, যা মোট নিহতের ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ৯৭৪ জন নারী, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে দুই হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই হাজার ৪৮৭ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এক হাজার ৯৬৭টি দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৯৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন।
এই সময়ে ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ২৯৭৩ দুর্ঘটনায় ৩০৯১ জন নিহত হয়। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১.২ শতাংশ, প্রাণহানি কমেছে ১৫.৪১ শতাংশ।
রোড সেফটি বলছে, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে এক হাজার ১২৮ শিশু নিহত হয়েছে; অর্থাৎ প্রতিদিন তিনটির বেশি শিশুর প্রাণ যাচ্ছে সড়কে। দেশের আঞ্চলিক সড়কগুলোয় গত বছর সবচেয়ে বেশি শিশু মারা গেছে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময়, বসতবাড়ির আশপাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশের বেশি শিশু মারা গেছে যাত্রী বা পণ্যবাহী বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কারের ধাক্কায়। এরপর আঞ্চলিক বা গ্রামীণ সড়কের যানবাহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ১৬ শতাংশ শিশুর প্রাণ গেছে বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায়। স্থানীয়ভাবে তৈরি নছিমন, ভটভটি বা মাহিন্দ্র কেড়েছে প্রায় সাত শতাংশ শিশুর প্রাণ।
রোড সেফটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কে আগের বছরের (২০২২) চেয়ে গত বছরে শিশুমৃত্যু কমেছে। কিন্তু বেড়েছে আঞ্চলিক সড়কে। যেসব দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শিশুদের মৃত্যু হয়, এর এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটে দুপুরের দিকে। তবে সকাল ও বিকেলের দিকেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৩ শতাংশেরই বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এরপরই আছে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু। নিহত শিশুদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ এই বয়সী।
সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার রোধে ১০টি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সুপারিশগুলো হলো-
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে।
৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে।
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে।
৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সারাবাংলা/এনইউ