Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণহত্যার রায়ে চাপের মুখে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:২৭

ঢাকা: আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশের পর গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঠেকানো এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা নিয়ে নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার আন্তর্জাতিক আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তাতে ইসরায়েলের প্রধান সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রও চাপে পড়েছে। গণহত্যার লাগাম টানতে বাইডেন প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আইসিজের আদেশ ইসরায়েল ‘যথাযথভাবে মানবে’ বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে আদেশের পরদিনই শনিবার গাজায় বোমা হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। একদিনে আরও ১৭৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩১০ জন। পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে বেসামরিক লোকজনকে। সিএনএন এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ‘জরুরি মৌলিক সেবা’ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে বলে আইসিজে আদেশ দিলেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু বলেননি।

আদেশের পর গণহত্যার মামলাকারী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সেরিল রামাফোসা বলেন, ‘ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো তাদের অপরাধ উন্মোচন হলো।’

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক তা মানতে ইসরায়েলকে তাগিদ দিয়েছে। এর আগে, আইসিজে ইউক্রেনে আগ্রাসন না চালানোর জন্য রাশিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা অমান্য করেন।

আইসিজের বিচারক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোয়ান দোনোগ আদেশটি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের পাল্টা হামলা গাজায় বেসামরিক মানুষকে ‘চরম অরক্ষিত’ অবস্থায় ফেলেছে। লাখো মানুষ হতাহত হয়েছেন; বাড়িঘর, স্কুল, চিকিৎসাকেন্দ্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আলজাজিরা জানায়, খান ইউনিসের আল-আমল হাসপাতালকে লক্ষ্যে পরিণত করায় ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। টানা ছয় দিন হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনের ন্যাশনাল কাউন্সিল বলছে, ইসরায়েল গাজার সীমান্তে যে বাফার জোন তৈরি করতে চাচ্ছে, তা করা হলে গাজার আয়তন অন্তত ২০ শতাংশ কমে যাবে।

এদিকে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ ও সহযোগিতা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ওই সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ। এ অভিযোগে শুক্রবার ইউএনআরডব্লিউএর সাত সদস্যকে বরখাস্ত করে জাতিসংঘ। এর জেরে প্রথমে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক ঘোষণায় বলে, তারা সাময়িকভাবে তহবিল সরবরাহ বন্ধ রাখবে।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আগামী সপ্তাহে: গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)। আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে। খবর এএফপির।

শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি এই ঘোষণা দিয়েছেন। আলজেরিয়া বুধবারের বৈঠক আহ্বান করেছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এটি ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের ওপর আরোপিত অস্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ঘোষণার বাধ্যতামূলক প্রভাব ফেলবে।’

শুক্রবার আইসিজে বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং গাজায় মানবিক সাহায্যে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়নি।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, সিদ্ধান্তটি ‘স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা যা চাইছে তা করার জন্য আগে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’

তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘সম্ভাব্য গোলযোগের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’ কারণ, আলজেরিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আরব গ্রুপের পে প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেবে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত নিরাপত্তা পরিষদ ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সর্বশেষ শুধুমাত্র দুটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। ডিসেম্বরে যখন ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল, তখন নিরাপত্তা পরিষদ গাজার অবরুদ্ধ জনসংখ্যার জন্য বিপুল পরিমাণ সাহায্য পাঠানোর দাবি করেছিল।

হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ১৪০ জন মারা গেছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। হামাস প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে।

ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের মধ্যে এখনও প্রায় ১৩২ জন গাজায় আটক রয়েছে। কমপে ২৮ জন জিম্মিকে হামাস হত্যা করেছে।

ইসরায়েল হামাসকে দমন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অভিযান শুরু করলে গাজার ২৬ হাজার ৮৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

আন্তর্জাতিক আদালত প্রায় চার মাসব্যাপী যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকার সময় ইসরায়েলকে ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন মেনে সবকিছু করার পরামর্শ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে গণহত্যার অভিযোগ ভিত্তিহীন: আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগগুলো ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি তার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর আনাদোলুর।

শুক্রবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আইসিজে-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই বেসামরিক ক্ষতি কমাতে, মানবিক সহায়তা প্রবাহ বাড়াতে সমস্ত সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

এক বিবৃতিতে মুখপাত্র আরও বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি গাজায় গণহত্যার অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং এটি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য যে আদালত গণহত্যা সম্পর্কে কোনও অনুসন্ধান করেনি বা তার রায়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়নি। তবে হামাসের হাতে বন্দী সমস্ত জিম্মিকে নিঃশর্ত ও অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আদালত।

তিনি আরও বলেন, আদালতের রায়টি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে।

মামলার অগ্রগতির সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র আদালতের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই সপ্তাহ শুনানি শেষে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সন্ধায় রায় ঘোষণা করে আইসিজে।

রায়ে গাজায় গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে দখলদার ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। একইসঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাহিনী গণহত্যা করবে না। ইসরায়েলকে এ বিষয়ে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। একইসঙ্গে গণহত্যা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।

আইসিজে’র বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি বিচারক জোয়ান ই ডনোগু রায় পড়ে শোনান। তিনি বলেন, এই রায় ইসরায়েলের জন্য আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।

বিচারক ডনোগু আরও বলেছেন, আদালত নোট করেছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে প্রচুর সংখ্যক মৃত্যু এবং আহত হয়েছে, সেইসঙ্গে ব্যাপকভাবে বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে এবং বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ গণহত্যা কনভেনশনের বিধানের মধ্যে পড়ে। গণহত্যা মামলায় যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।

ডনোগু বলেন, জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে ফিলিস্তিনিরা সুরক্ষিত গোষ্ঠী। আদালত ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।

সারাবাংলা/একে

আইসিজে ইসরায়েল ফিলিস্তিন

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর