‘পুরো শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনই মৌলবাদী অপশক্তির মূল এজেন্ডা’
২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৭
ঢাকা: সম্প্রতি পাঠ্যপুস্তকে শরীফ-শরীফা গল্প নিয়ে যে মাতামাতি শুরু হয়েছে তা মৌলবাদী অপশক্তির একটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের উসকানি বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, শরীফ-শরীফার গল্প বাতিল নয়, বরং পুরো শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনই এই মৌলবাদী অপশক্তির মূল এজেন্ডা।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘স্কুল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নিয়ে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিশ্ব শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম ও শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তকের কোনো রচনা প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করে মৌলবাদী অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবের পাঠ্যপুস্তক ছেঁড়ার প্রসঙ্গে টেনে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সরকারকে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। আসিফ মাহতাবের বক্তব্য ধর্মের অপব্যবহার। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বানাতে চাইছে, মোল্লাদের রাষ্ট্র কায়েম করতে চাইছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসিফ সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে তৃতীয় লিঙ্গের ‘শরীফার গল্প’ রচনাটি ছিঁড়ে ফেলে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এটিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এবং সেখানে সমকামিতার বিষয়টির কথা বলেছেন বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রণ ও তথ্যগত যেসব ভ্রান্তি রয়েছে তা দ্রুত নিরসন করতে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’ পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে জীববিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের রাখা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিন বলেন, ‘আসিফ মাহতাবের ছিঁড়ে ফেলা অংশে জায়গা পেয়েছে হিজড়াদের জীবন নিয়ে ‘শরীফার গল্প’ নামে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ। আসিফের দাবি, এই গল্পের মাধ্যমে ‘সমকামিতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। যা মোটেই ঠিক নয়।‘
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আসিফ মাহতাবের উদ্ধত ও অশিক্ষকসুলভ আচরণ শিক্ষকরা যদি গ্রহণ করে, তাহলে তা গোটা সমাজের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা একজন মুক্তিযোদ্ধা, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কনিষ্ঠ শিক্ষকের এমন আচরণ! তিনি কীভাবে সেখানে নিয়োগ পেলেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এটি পরিকল্পিত।’
শিক্ষাক্রম নিয়ে আসিফ মাহতাব ‘মিথ্যাচার করেছেন’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বইয়ে যা নেই, তা নিয়ে কথা বলেছেন। তৃতীয় লিঙ্গ আল্লাহর সৃষ্টি এবং আমাদের সংবিধান জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়। তার বক্তব্যে ধর্মের অপব্যবহার ও সংবিধান বিরোধিতা দেখা গেছে।’ আসিফের উপযুক্ত শাস্তি না হলে এ ধরনের প্রবণতা বাড়তে থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আসিফ মাহতাব বই ছিঁড়ে ফেলে রাষ্ট্রদ্রোহ করেছে। তাকে এ ঘটনায় অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে বলে দাবি করেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম