Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থের প্রতিবেদন আইওয়াশ: হাইকোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৫

ফাইল ছবি

ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করার পর চিকিৎসাধীন শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট লোক দেখানো (আইওয়াশ) বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আর ওই কমিটির করা সুপারিশকে হাস্যকর বলে আখ্যা দিয়েছেন আদালত।

আয়ানের আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করার পর সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

এদিন ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। আর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে।

তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়, আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।
তবে আইনজীবী আজ হাইকোর্টকে বলেছেন যে, আয়ানের অ্যাজমার বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অস্ত্রোপচারের আগে আয়ানকে অ্যানেস্থেসিয়া বা সংবেদনহীন করতে প্রয়োগ করা ইনজেকশন প্রোফোফল মারাত্মক অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাকটয়েড রিয়্যাকশন) সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত হয়ে (ল্যারিঙ্গো স্পাজম) বা (ব্রঙ্কোস্পাজম) শ্বাসনালীর আশপাশের পেশি শক্ত হয়ে খিঁচুনি হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) ও ওষুধ (মেডিকেশন) দিয়ে আয়ানের হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে ১০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। যার কারণে হাইপক্সিক ব্রেন ইনজুরি (মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত্যু) হয়ে আয়ানের মৃত্যু হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তবে রিটের পক্ষের আইনজীবী শিশু আয়ানের পাজড়ের হাড় ভেঙে ফেলার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন।

তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, কোনো চিকিৎসকই রোগীর মৃত্য চায় না, তবে এখানে আয়ানের ক্ষেত্রে (নেগলিজেন্স) অবহেলা দেখা যাচ্ছে। ছেলেটির অ্যাজমা জেনেও অপারেশনের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো?

অন্যদিকে, শিশু আয়ানের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধের তথ্য দেখে হাইকোর্ট বলেন, বাইপাস সার্জারিতেও এতো ওষুধ লাগে না। এখানে শিশুটিকে যত ওষুধ দেওয়া হয়েছে!

শুনানির একপর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনকে ‘লোক দেখানো (আইওয়াশ) এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের একটা ডিসিপ্লিনে চলা উচিত উল্লেখ করে হাইকোর্ট ‘মেডিকেল নেগলিজেন্স’ বিষয়ে একটি টিম বা বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

শুনানিতে শিশু আয়ানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে ‘মেনুপুলেটেড’ উল্লেখ করে এ ঘটনায় পুনরায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান রিটের পক্ষের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। পরে শিশু আয়ানের বাবা রিটে পক্ষভুক্ত হন। নতুন করে রিটে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

এরপর গত ১৪ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটের শুনানি শেষ হয়।

এরপর গত ১৫ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে সাঁতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাতদিন পর গত ৮ জানুয়ারি লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ানকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ

আইওয়াশ আয়ান প্রতিবেদন মৃত্য স্বাস্থ্য হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর