Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোশাকের ন্যায্যমূল্য ও ব্র্যান্ড তৈরিতে প্রাধান্য দেবে ফোরাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১২

ঢাকা: দেশের পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে চায় পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্যানেল ফোরাম। প্যানেলের নেতারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে পোশাক কারখানাগুলোর নিরপত্তা ও কর্মপরিবেশ আরও উন্নতকরণ, এক্সিট পলিসি তৈরি এবং কমপ্লায়েন্স ও অডিট নিশ্চিত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বিজিএমইএ’র ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন উপলক্ষ্যে ফোরাম আয়োজিত এক প্রেস মিটে এ সব অগ্রাধিকারের কথা জানান ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ।

আগামী ৯ মার্চ পোশাক খাতের উদ্যোক্তার এই সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘দেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে একটি অগ্নি-পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সম্মিলিতভাবে আমরা এই অগ্নি-পরীক্ষা মোকাবিলা করতে চাই। আমাদের প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহায়তা, কারখানাগুলোর নিরপত্তা ও কর্মপরিবেশ আরও উন্নতকরণ, এক্সিট পলিসি প্রণয়ণ এবং কমপ্লায়েন্স ও অডিট নিশ্চিত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী দুবছর দেশের অর্থনীতির জন্য বিজিএমইএ’র ভূমিকা হতে হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বার্থে আমি ‘ভালো ব্যবসা করার পরিবেশ’ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের অন্যতম নির্বাচনি এজেন্ডা হবে ব্রান্ড স্ট্রাটেজি তৈরি করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। আমরা নির্বাচিত হলে ব্যবসায়ীরা কোনো কারণে ব্যবসা করতে না পারলে যেন সহজে ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারেন সে জন্য এক্সিট পলিসি তৈরি করবো, বর্তমানে দেশে কোনো এক্সিট পলিসি নেই।’

তিনি আরও বলেন,‘ আগামী দিনে তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো ক্রেতাদের থেকে উপযুক্ত মূল্য আদায় করা। ক্রেতারা যে মানের পোশাক অন্যান্য দেশ থেকে নেন ঠিক একইমানের পোশাক তারা বাংলাদেশ থেকেও সংগ্রহ করেন। কিন্তু বাংলাদেশি পোশাক প্রস্তুতকারীদের একই মূল্য দেওয়া হয়না। এ বিষয়েও বিজিএমইকে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে ক্রেতাদের সঙ্গে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তৈরি পোশাক শিল্পে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তাদের নিয়ে আমার ভাবনা রয়েছে। তারা যাতে সহজে ব্যবসা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এ সব উদ্যোক্তা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় ভুগেছেন।

ক্রেতাদের কাছ থেকে ঠিকসময়ে মূল্য পরিশোধ না হওয়া, অর্ডার বাতিল করা, ক্রেতা থেকে আরোপিত ডিসকাউন্ট, ক্রেতা না পাওয়া বা নিয়মিত অর্ডার না পাওয়া, ব্যাংক থেকে উপযুক্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়া- এ সব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ করা হবে।

ফয়সাল সামাদ আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রভাব আমাদের অর্থনীতি তথা বাংলাদেশের একক বৃহৎ রফতানিখাত তৈরি পোশাক শিল্পের ওপরও পড়েছে। ২০২২ সালের শেষ দিকে শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে মাত্র ৯ শতাংশ কারখানায় সক্ষমতার শতভাগ ক্রয়াদেশ ছিল, ৮২ শতাংশ কারখানার সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম ক্রয়াদেশ ছিল এবং ৬ শতাংশ কারখানায় কোনো ক্রয়াদেশ ছিল না।’

ক্রেতাদের দেউলিয়াত্বের কারণে মোট রফতানির ৬ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ অপরিশোধিত থাকার ফলে মালিকরা পিসি ও ওডি ইত্যাদির বোঝা বয়ে বেড়ানোসহ সবচেয়ে বিপদজন ফোর্সড লোনের আতঙ্কে রয়েছেন।

আসন্ন বিজিএমইএ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি ফোরামের নেতারা ‘গার্মেন্টস শিল্পের অগ্নিপরীক্ষা: আমাদের কথা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেই আলোচনা সভায় ৬৬ জন মালিক একটি জরিপে অংশ নেন।

সেই জরিপের তথ্যমতে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পরও পণ্যের কোনো মূল্য বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ৭৯ দশমিক ১ শতাংশ উদ্যোক্তা।

গত বছরের তুলনায় কাস্টমস ও বন্ড সংক্রান্ত খরচ বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে পোশাক কারখানাগুলোর গড়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি (উৎপাদন সক্ষমতা) খালি ছিল। আগামী ৪ মাসে ফ্যাক্টরিগুলোর ক্যাপাসিটির তুলনায় গড়ে ৬২ দশমিক ২১ শতাংশ বুকড আছে, অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ ক্যাপাসিটি খালি রয়েছে।

গত এক বছরে গড়ে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এফওবি মূল্য কমেছে। অনুষ্ঠানে ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির কারণেও মালিকদের নানামুখি সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফ্যাক্টরিগুলোর বিদ্যুৎ বিল ও লোডশেডিং এর কারণে ডিজেলের ব্যবহার বৃদ্ধি এমনকি পরিবহন ক্ষেত্রেও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ২ বছরে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত বিশ বছরের সর্বোচ্চ।

২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহত্তম কারখানগুলোতে গ্যাসের মূল্য ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ বেড়েছে, যার কারণে ভোগান্তি দিনে দিনে বেড়েই চলছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

টপ নিউজ ন্যায্যমূল্য পোশাক কারখানা বিজিএমইএ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর