Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১৯

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: আর্থিক খাতের সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সে বিষয়েও সকলইকে সতর্ক থাকতে হবে। গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান। বর্তমান রাষ্ট্রপতি এই প্রথম জাতীয় সংসদে ভাষণ দিলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদেরসহ সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূলভিত্তি। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত মহান এ প্রতিষ্ঠানটি জনগণের সব প্রত্যাশার ধারক ও বাহক। জনগণের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে জাতীয় সংসদ যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো মতদ্বৈততা জনগণ প্রত্যাশা করে না। তাই সংসদকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে সকলের প্রতি আমি আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।’ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সফলভাবে নির্বাচন পরিচালনা করায় দেশে গণতান্ত্রিক শক্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই, জনগণের রায় মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।’

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত স্বল্পমেয়াদি (২০২৫ সাল), মধ্যমেয়াদি (২০৩১ সাল) এবং দীর্ঘমেয়াদি (২০৪১ সাল) কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নতুন মন্ত্রিসভাকে নিশ্চিত করতে হবে।’

আর্থিকখাতের সফলতা তুলে ধরে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘করোনা অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের পরও গত প্রায় দেড় দশক ধরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বেড়ে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার এবং জাতীয় বাজেটের আকার ৯ গুণের বেশি দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের বার্ষিক রফতানি আয় প্রায় ৪ গুণ বেড়ে বর্তমানে ৫৫ দশমিক পাঁচ-ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারি চাকরীজীবী ব্যতীত ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে।’

সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশে বর্তমান বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪৯২ লাখ মেট্রিক টন। ফলে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গত দেড় দশকে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। আইকনিক পদ্মা সেতু, পায়রা সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় গোমতী প্রভৃতি অসংখ্য সেতুসহ সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পাকা মহাসড়ক প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়ক ৭৬ গুণ বেড়ে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেড় দশকে রেলপথের পরিমাণ দেড় গুণ বাড়িয়ে ৩ হাজার ৪৮৬ কিলোমিটার করা হয়েছে।’

জেন্ডার সমতা ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে সরকার জীবনচক্রভিত্তিক কাঠামোর আওতায় বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, অসচ্ছল মহিলাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় আনার জন্য ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট বাস্তবায়ন করছে। ‘স্বনির্ভরতার জন্য সহায়তা’-এ মূলনীতি অনুসরণ করে ওই কার্যক্রমে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার আলোকে স্থায়ীভাবে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা ইত্যাদি উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী ১৩ লাখের বেশি উপকারভোগীর মধ্যে ৩৬ মাসব্যাপী ভাতা দেওয়া হয়।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন। এর সুফল ভোগ করছে দেশের ১৭ কোটি জনগণ। বর্তমানে দেশের মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৯ দশমিক শূন্য আট কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৩ দশমিক এক চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে। দেশের টেলিডেনসিটি প্রায় ১০৮ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি প্রায় ৭৫ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, প্রশাসন, উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, আইসিটি শিল্পসহ প্রায় সব খাতে সমানভাবে উন্নতি হয়েছে। বিগত বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাফল্যের স্বীকৃতস্বরূপ বাংলাদেশ ভূষিত হয়েছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

অধিবেশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভাষণ রাষ্ট্রপতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর